- বাংলাদেশ
- করোনা টিকা প্রয়োগের হিসাবে গরমিল
করোনা টিকা প্রয়োগের হিসাবে গরমিল

দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা প্রয়োগের হিসাবে গরমিল হয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার টিকা এসেছে। গত তিন বছরে প্রয়োগ করা হয়েছে ৩৬ কোটি ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫ ডোজ। সরকারের হাতে মজুত রয়েছে ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮ ডোজ। এ হিসাবে যে টিকা এসেছে তার চেয়ে ২৩ লাখ ৪ হাজার ৩৭৩ ডোজ বেশি ব্যবহার করা হয়েছে।
বাড়তি টিকার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, টিকা নষ্ট হতে পারে এ বিবেচনায় প্রতি ভায়ালে দুই ডোজ বেশি দেওয়া হয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, এক ভায়ালে বেশি টিকা দেওয়ার এমনকি ব্যবহারেরও সুযোগ নেই। নষ্ট হওয়ার বিবেচনায় ৫ শতাংশ টিকা বেশি দেওয়া হয়। পরিবহন ও সরবরাহের সময় টিকা নষ্ট হয়।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে বিভিন্ন উৎস থেকে আট ধরনের টিকা এসেছে। কেনা ও উপহার দুই উৎস মিলে দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা এসেছে ৫ কোটি ৬১ লাখ ৭১ হাজার ১১০ ডোজ। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৫ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৭৬৮ ডোজ। ফাইজার (আরটিভি) টিকা এসেছে ৭ কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯০ ডোজ। প্রয়োগের হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ৮ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৩২ ডোজ। মডার্না টিকা এসেছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৬০ ডোজ। প্রয়োগ করা হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার ১২৬ ডোজ। সিনোভ্যাক্স টিকা ৬ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ ডোজ এসেছে। তবে ব্যবহার করা হয়েছে ৬ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ৬৩৫ ডোজ।
দেশে করোনা টিকা প্রয়োগ শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। সে সময় ইপিআই পরিচালক ছিলেন শামসুল হক। তিনি বাড়তি টিকার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা এক ভায়ালে ১১ ডোজ ছিল; তবে প্রাপ্তির হিসাবে ১০ ডোজ দেখানো হয়েছে। ফাইজার ও মডার্না টিকার এক ভায়ালে ১৪ ডোজ ছিল। এটি ১২ হিসাবে দেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রা জনিত, রং পরিবর্তন, পরিবহনসহ নানা কারণে টিকা নষ্ট হয়। এ কারণে ভায়ালে বাড়তি ডোজ টিকা দেয় প্রস্তুতকারী সংস্থা। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টিকা নষ্ট হয় অনেক কম। এতে বাড়তি টিকা প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে টিকা প্রদানকারী একাধিক নার্স জানান, এক ভায়াল থেকে ১০ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা কষ্টসাধ্য ছিল। ফাইজার টিকা সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে। এদিকে টিকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে করোনা টিকা প্রয়োগ, পরিবহন ও সরবরাহসহ বিভিন্ন করণে ৫ থেকে ১০ শতাংশ নষ্ট হয়। বাংলাদেশে এ হার ৫ শতাংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২৩ লাখ টিকার হিসাবে গরমিলের দায় ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি ঝামেলা তৈরি হয়েছে গণটিকাদান কর্মসূচিতে। এক দিনে ১ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে। এসব টিকার হিসাব যথাযথভাবে ওয়েবসাইটে তোলা হয়নি।
ইপিআইর সাবেক ব্যবস্থাপক মো. তাজুল ইসলাম বারী বলেন, প্রতি ভায়ালে এক ডোজ বা দুই ডোজ টিকা বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। মোট টিকার সঙ্গে ৫ শতাংশ বেশি দেয় টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি। এ টিকাও নষ্ট হয়ে যায়। ১০ ডোজের ভায়াল থেকে ১১ ডোজ করে ব্যবহার করার নির্দেশনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও দেয়নি। এটা করা হলে টিকার কার্যকারিতা হারাবে। অনেক ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, তিনটি কারণে টিকার হিসাবে গরমিল হতে পারে। হয়তো এক ভায়ালে ১২ ডোজ টিকা থেকে ১৪ ডোজ প্রয়োগ হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৩ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এ সময় মাঠ পর্যায় থেকে ভুল তথ্য আসতে পারে। ইপিআইর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভুল তথ্য দিতে পারেন।
অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে যে টিকা পেয়েছি তার বেশি প্রয়োগের সুযোগ নেই। কোনো এক ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে হয়তো। এ বিষয়ে ইপিআই এবং এমআইএসের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মন্তব্য করুন