- বাংলাদেশ
- বিল বকেয়া রাখা কোম্পানি পাচ্ছে সরবরাহের দায়িত্ব
ভোলার গ্যাস সিএনজি হয়ে আসবে ঢাকায়
বিল বকেয়া রাখা কোম্পানি পাচ্ছে সরবরাহের দায়িত্ব

দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস অবশেষে দেশের মূল ভূখণ্ডে আসছে। সিএনজি আকারে এই গ্যাস তিতাসের আওতাধীন শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা হবে; যার কাজ পেতে যাচ্ছে ইন্ট্রাকো সিএনজি। এই সিএনজির প্রতি ঘনমিটারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা। যদিও গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হওয়া বর্ধিত দর অনুসারে শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা। সিএনজি ফিলিং স্টেশনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম পড়ছে ৪৩ টাকা। অর্থাৎ ভোলার গ্যাস চলতি দামের চেয়েও বেশি মূল্যে বিক্রি করবে ইন্ট্রাকো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোলা থেকে উত্তোলিত গ্যাস সিএনজি আকারে সরবরাহের জন্য ইন্ট্রাকো ও সুন্দরবন গ্যাসের মধ্যে আগামী ২১ মে ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। যদিও ইন্ট্রাকোর একাধিক সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বাবদ প্রতিষ্ঠানটির কাছে এখনও তিতাস গ্যাসের শতকোটি টাকার বেশি বকেয়া পাওনা। সাম্প্রতিক সময়ে ৩০ কিস্তিতে এই বকেয়া পূরণের সুযোগ পেয়েছে কোম্পানিটি।
গত ১০ মে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে তিতাসের আওতাধীন শিল্পকারখানায় সরবরাহের বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে জ্বালানি বিভাগ। এতে গ্যাসের দাম, বিভিন্ন সংস্থার মার্জিন, গ্যাস সরবরাহকারীর জন্য পালনীয় শর্তের বিষয় উল্লেখ করা হয়।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করলেও প্রথম পর্যায়ে ইন্ট্রাকোকে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে সরবরাহের কাজ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে দিনে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজি আকারে আনা হবে। পরে তা ২০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা হবে। ভালুকা-গাজীপুরের জ্বালানি সংকটে
ভোগা কারখানাগুলো গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
দৈনিক ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজিতে পরিণত করে পরিবহনের জন্য ৬০টি কম্প্রেসর এবং ২৩৮টি ক্যাসকেড ট্যাঙ্কার প্রয়োজন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ইন্ট্রাকো বিশেষভাবে রূপান্তরিত ট্রাকে সিলিন্ডার সেট করে তাতে সিএনজি আনবে।
গ্যাসের দাম
ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি গত বছরের ৩১ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদন পেট্রোবাংলায় জমা দেয়। প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে ভোলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৮৬ এমএমসিএফ। ভোলার গ্যাসক্ষেত্রের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১২০ এমএমসিএফ। ফলে উদ্বৃত্ত গ্যাসের পরিমাণ বর্তমানে ৩৪ এমএমসিএফ। ওই প্রতিবেদনে প্রতি ঘনমিটারের দাম ৫১.১২ টাকা প্রস্তাব করা হয়। পরে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতি ঘনমিটারের দাম ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রতি ঘনমিটার ফিড গ্যাসের মূল্য ধরা হয়েছে ১৭ টাকা, সিএনজি স্টেশনগুলোর ক্ষেত্রে যা ৩৫ টাকা। এই ১৭ টাকার মধ্যে বাপেক্স, পেট্রোবাংলা, সুন্দরবন, আরপিজিসিএলসহ বিভিন্ন কোম্পানির মার্জিন, সঞ্চালন ও বিতরণ মাশুল গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল ও ভ্যাট অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
মার্জিন বেশি
সিএনজি স্টেশনগুলো প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করে ৮ টাকা মার্জিন পায়। সেখানে ভোলার গ্যাস আনতে ইন্ট্রাকো পাচ্ছে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা । এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার ব্যাখ্যা হচ্ছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ভোলা থেকে ঢাকা পর্যন্ত গ্যাস আনতে প্রায় ২৩০-২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই মার্জিন বেশি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম সমকালকে বলেন, সিএনজি আকারে ভোলার গ্যাস আনার পরিকল্পনা ভালো উদ্যোগ। অনেক দেশেই এখন গ্যাস সরবরাহে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর পরিবহন সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সিএনজি আকারে গ্যাস পরিবহন খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
মন্তব্য করুন