দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকো ট্যুরিজম জোন হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে যন্ত্রযান বা নৌযানের নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। হাওরে পর্যটক আসা বাড়ায় মোটরচালিত নৌযান বেশি ঢুকছে। যন্ত্রযানের তাণ্ডবে হাওরের প্রকৃতি-পরিবেশ বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় অভিজ্ঞজনরা।

টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের জয়পুরের বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী কবির আহমদ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের গাছ, মাছ ও পাখি বাঁচিয়ে রাখতে যন্ত্রযান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাওরের নানা পথ দিয়ে শত শত ট্রলার, ইঞ্জিনচালিত হাউস বোট মধ্যনগর দিয়ে ঢুকে জয়পুর পর্যন্ত আসে। আবার জয়পুরের দিকে ঢুকে মধ্যনগর পর্যন্ত যায়। ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌযানের এমন অবাধ চলাচল না ঠেকালে হাওরের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন হবে।

রাজধানী ঢাকার হাউস বোট চন্দ্রাবতী ও রূপকথার মালিক ইখতিয়ার হোসেন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে এখন ৭৫টি হাউস বোট এবং ২০০ ট্রাডিশনাল বোট (ইঞ্জিনচালিত) পর্যটক বহন করছে। সব মিলিয়ে যন্ত্রযান প্রায় ৪০০ হবে। এ নৌযানগুলোতে চলাচলের পথ নির্ধারণ করে দিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকেই।

টাঙ্গুয়ার হাওরে দীর্ঘদিন হয় কাজ করছেন উন্নয়নকর্মী এহিয়া সাজ্জাদ। হাওরাঞ্চলে যন্ত্রযানের রুট হিসেবে নিজস্ব পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি। বললেন, সুনামগঞ্জ থেকে সুরমা, বৌলাই, পাটলাই নদী হয়ে টাঙ্গুয়ার পাড়ের গোলাভারীতে এসে থামবে পর্যটকবাহী নৌযান। অন্যদিকে মধ্যনগর থেকে বংশীকুণ্ডা বাজার বা চাপাইতি এসে থামতে হবে ইঞ্জিনচালিত নৌযানগুলোকে। ওখানে থাকবে পর্যটকদের বহন উপযোগী হাতে বাওয়া নৌকা। এগুলো দিয়েই হাওরে ঘুরতে হবে পর্যটকদের। তিনি জানান, অনেক সময় সুনামগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলে ডাম্পের বাজার, নতুন বাজার বা শ্রীপুর পর্যন্ত গিয়ে পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মন্দিহাতা বা গোলাভারী দিয়ে হাওরে ঢোকেন। এটিও বন্ধ করতে হবে। ওখান থেকে  হাতে বাওয়া নৌকায় যেতে হবে হাওরে।

টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন বললেন, সুনামগঞ্জ থেকে উত্তর শ্রীপুরে বা শ্রীপুর বাজারে, তাহিরপুর থেকে গোলাভারী, মধ্যনগর থেকে বংশীকুণ্ডা পর্যন্ত ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলার অনুমতি থাকতে হবে। এরপর হাতে বাওয়া নৌকায় হাওরের ভেতরে ঢুকতে হবে। যেখানে পর্যটকবাহী ট্রলার বা হাউস বোট থামবে। একসময় আশপাশের গ্রামে ছোট ছোট ইকো রিসোর্ট গড়ে উঠবে। ওখান থেকে হাতে বাওয়া নৌকায় হাওরের ভেতর পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থাও গড়ে উঠবে।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরশাদুল হক বললেন, হাওরে পাখি কিংবা মাছের অভয়াশ্রম যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,  সেভাবে পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ঠিক করে দিতে হবে। তিনি জানান, সেন্টমার্টিনের দক্ষিণপাড়া ও চেরাদিয়ায় প্রবাল বেশি থাকায় সেখানে পর্যটকদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের ক্ষেত্রেও একইভাবে পর্যটকদের ভ্রমণক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

গত শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে টাঙ্গুয়ার হাওরের বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাওরে যন্ত্রযানের রুট নির্ধারণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন আলোচকরা। জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়– এমন পথ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলতে পারবে না। জেলা প্রশাসন সেই নীতিমালা তৈরির কাজ করছে।