কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন সত্তরোর্ধ্ব খতিজা বেগম। ঘূর্ণিঝড় মোকার আঘাতে অন্য অনেকের সঙ্গে তাঁর ঘরটিও বিধ্বস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দ্বীপের মাঝারপাড়ার সেই ঘরের সামনে কাঁদছিলেন তিনি। এ সময় এই বৃদ্ধা বলেন, ‘ঝুপড়ি ঘরে কোনোরকমে মাথা গুঁজে ছিলাম। ঝড়ে সেই ঘর ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। এর পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে ত্রিপল টানিয়ে এক রাত ছিলাম। আবার ঝড়-বৃষ্টিতে সেটিও ভেঙে গেছে। এখন কই যাব, জানি না।’

ঘূর্ণিঝড় মোকার আঘাতে টেকনাফের সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের বহু গাছপালা ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন খতিজা বেগমসহ হাজারো মানুষ। ভাঙা ঘরে কোনোরকমে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে গতকালের বৃষ্টি। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারাও।

নাফ নদের উত্তর পাড়া গ্রামের জেলে নুরুল আমিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও কোনো সহায়তা পাইনি।’

সেন্টমার্টিনেও গতকাল সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে দ্বীপের গৃহহীন মানুষদের দুর্দশা আরও বেড়েছে। দ্বীপের বাসিন্দা রুমা আক্তার ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়ে পার্শ্ববর্তী আজিজ উল্লাহর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে পাশের ঘর কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি। সহায়তাও পাইনি। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে গাছচাপায় তছনছ ঘর এখনও সেভাবেই রয়েছে।’ টেকনাফের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। গতকাল ১৫ পরিবারকে দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও ৬ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। আজ আরও ১৮৫ পরিবারকে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঘূর্ণিঝড় মোকায় ঘরহারা রোহিঙ্গারা। গতকাল বিকেলে টেকনাফের লেদার জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্য একটি তাঁবুতে রান্নার জন্য মাটির চুলায় আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছিলেন হাসিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘চুলার নিচে পানি জমে থাকায় সকাল থেকে অনেকবার চেষ্টা করেও আগুন জ্বালাতে পারিনি। ছেলেমেয়েরা না খেয়ে আছে।’

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভেঙে যাওয়া তাঁবু পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে মেরামত করছিলেন মোহাম্মদ আমিন। তিনি বলেন, ‘চাল-ডাল ছাড়া কিছু পাইনি। বৃষ্টিতে তাঁবু তছনছ হয়ে গেছে।’

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান বজলু রহমান জানান, ওই ক্যাম্পে চল্লিশ হাজার মানুষের বসতি। ঘূর্ণিঝড়ে অধিকাংশ ঝুপড়ি ঘর ভেঙে গেছে। তার ওপর বৃষ্টি হওয়ায় রোহিঙ্গাদের কষ্ট আরও বেড়েছে। তবে বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু পরিবারকে বাঁশ ও রশি দেওয়া হচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হচ্ছে। গৃহহীনদের পুনর্বাসনে কাজ শুরু হয়েছে।