দেশের জনসংখ্যায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অনুপাত কেন ধারাবাহিকভাবে কমছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ‘সংখ্যালঘু জাতীয় কমিশন’ গঠনসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে আইনজীবী ঐক্য পরিষদ। 

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। এই দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তসহ বিশিষ্টজন।

তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর করা ৭২-এর সংবিধান সঠিক থাকলেও জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ‘প্রেতাত্মা’ থেকে সংবিধান এখনও মুক্ত হতে পারেনি। যার ফলে দেশে প্রতি বছরই ধর্মীয় সংখ্যালঘু কমছে। কেন কমছে সেটা অনুসন্ধান এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।

১০ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু জাতীয় কমিশন গঠন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধ, আগামী বাজেটে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য আনুপাতিক হারে বরাদ্দ, সমতল ও পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক বিচার, চাকরিতে ২০ শতাংশ সংরক্ষণ এবং ‘সমঅধিকার ও সমমর্যাদা’ নিয়ে বসবাসের নিশ্চয়তা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুনীল রঞ্জন বিশ্বাস এই দাবি তুলে ধরেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নাম থাকলেও তিনি ছিলেন না।  

১০ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আপনি যখন দেশের বাইরে যান, আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করে না আপনি হিন্দু নাকি মুসলমান। জিজ্ঞেস করে আপনার দেশ কোথায়। কে হিন্দু, কে মুসলিম, এই ভেবে আমরা যুদ্ধ করিনি।’

ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের প্রধান বক্তা রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘১৯৪৭ সালে এই পূর্ব বাংলায় সংখ্যালঘুর হার ছিল ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ। ১৯৭০ সালে তা নেমে এল ১৯ থেকে ২০ ভাগে। কিছুদিন আগেই বিবিএসের রিপোর্ট দেখলাম, সেই ১৯-২০ ভাগ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাটি কমে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ১ ভাগে। কেন হারিয়ে যাচ্ছে, কোনো সরকারকে তা নিরূপণ করে দেখতে দেখিনি। কিন্তু কেন হারিয়ে গেছে, তা নিরূপণের জন্য সরকারের উচিত একটা কমিশন গঠন করা। এটা করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ যাতে বাংলাদেশ হিসেবেই টিকে থাকতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের সংবিধান এখনও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হতে পারেনি। অনেক নেতারা আমাদের বলে, ‘আপনারা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু ভাবেন কেন?’ আমরা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে করি না। আমরা ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু হতে পারি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি। কাগজে-কলমে আইন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই অভিযোগ করে সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের’ অভিযোগও তোলেন তিনি।

সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিভাস চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সম্মলেন আরও বক্তব্য রাখেন- হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, আইনজীবী প্রশান্ত অ্যালবার্ট বাড়ৈ, ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া প্রমুখ।