মোগল আমলে রাজধানী ঢাকার প্রধান জলপথ ও পরিখা ছিল ধোলাইখাল। বুড়িগঙ্গা থেকে নৌকায় ধোলাইখাল হয়ে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সহজেই যাওয়া যেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে দখল ও দূষণে হারিয়ে গেছে ধোলাইখালের সেই জৌলুস। এখন শুধু ময়লার ভাগাড় আর বক্স-কালভার্ট অবশিষ্ট আছে।

এবার নগরীর এ গুরুত্বপূর্ণ খালটির সৌন্দর্য বর্ধনে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ময়লার ভাগাড় অপসারণ করে খাল সবুজায়ন করা হবে। সেই সঙ্গে তৈরি করা হবে হাঁটার জায়গা, ঝরনা ও সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের নিঃশ্বাস নেওয়ার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হবে খালটি।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ১৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের ময়লার ভাগাড় সরিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। খালের সঙ্গে যুক্ত পয়োনিষ্কাশনের সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। পলি বর্জ্য দীর্ঘস্থায়ীভাবে অপসারণ করা হবে। পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হবে।

খালের প্রায় ১৬ বিঘা অংশজুড়ে ২ লাখ বর্গফুটের একটি পুকুর নির্মাণ করা হবে। এ পুকুর ঘিরে থাকবে ২ হাজার ফুট প্রশস্ত হাঁটার পথ ও বাইসাইকেল লেন; ৬০ হাজার বর্গফুটজুড়ে করা হবে সবুজায়ন; থাকবে দুটি অ্যাম্ফিথিয়েটার (৬ হাজার বর্গফুটের একটিতে ৩৫০ জন এবং ২ হাজার ৩০০ বর্গফুটের অপরটিতে দেড়শ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে)।

এ ছাড়া দুটি শৌচাগার, ১ হাজার বর্গফুট আয়তনের বসার ঘাট, ২ হাজার ১০০ বর্গফুটের শিশুদের খেলার স্থান, চারটি কৃত্রিম ঝরনা এবং খাবারের জায়গা থাকবে। খালটি ঘিরে তৈরি হবে সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র।

বুধবার ধোলাইখাল জলাধার সবুজায়ন ও নান্দনিক পরিবেশ উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

তিনি বলেন, ‘ধোলাইখাল জলাধার এ এলাকার, পুরান ঢাকার ফুসফুস; একটি আকাঙ্ক্ষার জায়গা। সবুজায়ন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে করপোরেশন গৃহীত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ধোলাইখাল জলাধারের পরিবেশ হাতিরঝিলের চেয়েও সুন্দর ও নান্দনিক হবে। এক বছরের মধ্যেই এই নোংরা দৃশ্যপট, ভাগাড়ের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে সুন্দর, সবুজ ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’

মেয়র বলেন, ‘এখানে যেমন সুপ্রশস্ত হাঁটার পথ থাকবে, তেমন এলাকার শিশুরা এসে খেলতে পারবে। সাইকেল চালিয়ে তারা নান্দনিক পরিবেশ উপভোগ করবে। এখানে সবুজায়ন হবে, উন্মুক্ত মঞ্চ হবে, যেখানে আমরা ঐতিহ্য ধারণ করে আমাদের সংস্কৃতি চর্চা করব।’