সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে হঠাৎ বদলে গেছে মাঠের চিত্র। সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে হচ্ছেন– সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নগরীতে। অনেকেই মনে করছেন, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল অথবা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হানিফ কুটু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। তবে আরিফুল প্রার্থী না হওয়ায় নির্বাচন এখন অনেকটাই প্রাণহীন। তাই ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস নেই।

 শনিবার নাগরিক সমাবেশ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিসিক মেয়র আরিফুল। এর আগে অনেকেই মনে করেছিলেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং শেষ পর্যন্ত হাডাহাডি লড়াই হবে। কিন্তু আরিফুল সরে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, কোনো নাটকীয়তা না থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসতে পারেন জাতীয় পার্টির নেতা নজরুল ইসলাম বাবুল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হানিফ কুটু। দলীয় ভোট ভাগাভাগি হলে বেকায়দায় পড়তে পারেন আনোয়ার।

আশি ও নব্বইয়ের দশকে সিলেটে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা কুটু বর্তমানে দলীয় কোনো পদে না থাকলেও পরিচ্ছন্ন একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। মনোনয়নপত্র প্রসঙ্গে কুটু বলেন, আমাকে মনোনয়ন জমা না দেওয়ার জন্য বারবার বলা হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার আমি মনোনয়ন জমা দেব।

কুটু বলেন, ‘আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম না। সিলেট সিটিতে আওয়ামী লীগ যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। যিনি (আনোয়ার) সাধারণ ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন না, এমনকি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেও ছিলেন না– তিনি কীভাবে মনোনয়ন পান? এর বিরুদ্ধেই আমার অবস্থান।’

কুটু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ভোট তাঁর বাক্সে পড়তে পারে। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তাঁকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান কুটু।

তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন জমে ওঠেনি। অথচ আগের নির্বাচনে এমন সময় ঘরে ঘরে ছিল ভোটের আমেজ। কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারণে ঘরে থাকাও ছিল দায়। ঘরের কলিংবেল টেপামাত্রই অনেকেই ধরে নিতেন কোনো প্রার্থী এসেছেন। এবার ঘরে ঘরে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটা কম লক্ষ্য করা গেছে। খুব কাছের মানুষ ছাড়া প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না।

কাউন্সিলর প্রার্থীরা জানান, নির্বাচনের আবহ এখনও তৈরি হয়নি। বিএনপি নেতা ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কাউন্সিলর কয়েস লোদী, সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। তাঁরা অন্য বিএনপি নেতাদেরও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধ করছেন।

এ ব্যাপারে সিলেটের বিশিষ্ট আইনজীবী এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন সমকালকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল ইভিএম ব্যবহারের আগে প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা। ভোটারদেরও প্রশিক্ষণের একটি বিষয় সেখানে জড়িত। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি না হওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গায়েবি মামলা হওয়ার আশঙ্কা আছে। এরই মধ্যে তা দেখা গেছে। এসব কারণেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার শঙ্কা আছে। তিনি আরও বলেন, আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। এটিও প্রাণহীন নির্বাচনের একটি লক্ষণ।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগারিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আনন্দ, উচ্ছ্বাস নেই। নির্বাচনের আগে কমিশনের উচিত ছিল সব দলকে নিয়ে আলোচনা করা। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলা; কিন্তু কমিশন সেদিকে না গিয়ে তারা ভোটের দিনের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে আনন্দ, উৎসাহ না থাকলে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকে।