- বাংলাদেশ
- লোহিত সাগর এক বিস্ময়
লোহিত সাগর এক বিস্ময়

ভারত মহাসাগরের এক বিশেষ অংশ লোহিত সাগর। সাগরটি ভারত মহাসাগরের অংশ। লোহিত সাগরের দুই পাড়ে ৬টি দেশের অবস্থান। সাগরটির পূর্ব পাড়ে রয়েছে সৌদি আরব ও ইয়েমেন এবং পশ্চিম পাশে মিসর, সুদান, ইরিত্রিয়া ও জিবুতি। লোহিত সাগরের দক্ষিণ দিকে রয়েছে বাব এল মান্দেব প্রণালি ও এডেন উপসাগর। এ প্রণালি ও উপসাগরের মাধ্যমেই লোহিত সাগর ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে সাগরটির উত্তর পাশে রয়েছে সিনাই উপদ্বীপ; সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে সুয়েজ উপসাগর ও পূর্ব দিকে আকাবা উপসাগরের অবস্থান।
লোহিত সাগরের পানিতে সায়ানোফাইসি শ্রেণির এক ধরনের শৈবাল আছে। ট্রাইকোডেসমিয়াম এরিথ্রিয়াম নামে এক ধরনের সায়ানোব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে জন্মায় এ সাগরে। রঞ্জক সি ফাইকোএরিথ্রিনের আধিক্যের জন্য শৈবাল লাল রঙের হয়। এ শৈবাল প্রচুর পরিমাণে জন্মানোর কারণে এই সাগরের পানি লাল দেখায়। তাই সাগরের নাম রেড সি বা লোহিত সাগর।
লোহিত সাগরের আয়তন প্রায় ৪ লাখ ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। লম্বাটে এই সাগরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার এবং সর্বাধিক প্রস্থ মাত্র ৩৫৫ কিলোমিটার। লোহিত সাগরের গড় গভীরতা প্রায় ১ হাজার ৬০০ ফুট এবং সাগরের মাঝবরাবর এর সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ৮ হাজার ২০০ ফুট। তবে লোহিত সাগরের প্রায় ৪০ শতাংশ অঞ্চল অগভীর সমুদ্র। কোনো স্থলভাগের নিকটবর্তী অগভীর সামুদ্রিক অঞ্চলকে মহীসোপান বলা হয়। মহীসোপানের গভীরতা সাধারণত ৫০০ থেকে ৬০০ ফুটের মতো হওয়ায় মহীসোপান এলাকার জলের বৈশিষ্ট্য আলাদা। লোহিত সাগরের মহীসোপান অত্যন্ত প্রশস্ত হওয়ায় এ সাগরে রয়েছে নানা ধরনের জলজ প্রাণী। লোহিত সাগরে আছে প্রায় ১ হাজার প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী, ৩০০ প্রজাতির প্রবাল এবং ১ হাজার প্রজাতির মাছ। এসব প্রজাতির ১০ শতাংশ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এখানে হাঙ্গর পাওয়া যায় ১০ প্রজাতির, কচ্ছপ ৪ প্রজাতির। অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির ডুগং। এই সাগরের পানির ওপর এবং নিচের সৌন্দর্যকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে বহু পর্যটন ব্যবস্থা।
লোহিত সাগরকে ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে সুয়েজ খাল। সমুদ্রপথে ইউরোপ থেকে এশিয়ার দূরত্ব কমাতে সুয়েজ খাল খনন করা হয়েছিল। এরপর থেকে বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশেরও বেশি সমুদ্রবাণিজ্য লোহিত সাগরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই লোহিত সাগরকে বিশ্ব বাণিজ্যের ধমনি বলা হয়। সম্প্রতি ভয়ংকর এক বিস্ময়ের খোঁজ মিলেছে লোহিত সাগরে। সাগরটির উত্তরে এক অভিযান চালানোর সময় মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক ডেডপুল আবিষ্কার করেছেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের ১.১ মাইল গভীরে এটি অবস্থিত। প্রধান গবেষক স্যাম পুরকিস বলেছেন, লোহিত সাগরের তলদেশে এই বিরল ব্রাইন পুলে লবণের আধিক্যের জন্যই এই মৃত্যুকূপে এক ফোঁটাও অক্সিজেন নেই। এই পুলে যদি কোনো প্রাণী ভুলেও সাঁতার কাটে তার মৃত্যু অনিবার্য।পুলটির পরিমাপ ১ লাখ ৭ হাজার বর্গফুট, যা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটান সিটি থেকেও বড়।
মন্তব্য করুন