বাংলাদেশে চারুকলা চর্চার পথিকৃৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ শিল্পীকে ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের পথিকৃৎ ধরা হয়। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসের (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্ম ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহে। ১৯৩৩ সালে কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৮ সালে তিনি আর্ট স্কুল অনুষদে যোগ দেন। ওই বছরই সর্বভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে জলরঙের ছবির জন্য তিনি স্বর্ণপদক পান। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে জয়নুল আবেদিনের স্কেচগুলো ছিল অনবদ্য। এ দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান। সস্তা প্যাকিং পেপারে চায়নিজ ইঙ্ক ও তুলির আঁচড়ে ‘দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র’ নামে ছিল জয়নুলের এ ছবিগুলো, যা তাঁকে সারা ভারতে পরিচিত করে তোলে।

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভক্তির পর জয়নুল আবেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। জয়নুল আবেদিন ও ঢাকা প্রত্যাগত তাঁর কয়েকজন সহযোগী মিলে আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ সালে লন্ডনে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার পর জয়নুলের চিত্রে নতুন যে ধারাটি দেখতে পাওয়া যায় তাকে বলা যায়, ‘বাঙালি ধারা’। ‘দুই মহিলা’ (গোয়াশ, ১৯৫৩), ‘পাইন্যার মা’ (গোয়াশ, ১৯৫৩) ও ‘মহিলা’ (জলরং, ১৯৫৩) হলো এই সময়ের উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে ভিত্তি করে আঁকা ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারানো হাজারো মানুষের স্মৃতির উদ্দেশে আঁকা ‘মনপুরা’ তাঁর বৈচিত্র্যময় কাজের উদাহরণ।

১৯৭৫ সালে জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ে একটি লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে একটি গ্যালারি (শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা) প্রতিষ্ঠা করেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে তাঁর অঙ্কিত কিছু চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে।