খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ২০১৮ সালের নির্বাচনে সদ্য বিদায়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। এজন্য প্রথমেই ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে চমক দেখান তিনি। এ প্রকল্পের আওতায় গত সাড়ে চার বছরে ৫১টি ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। খরচ হয়েছে ৩৪২ কোটি টাকা। তবে খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণের ৯১টি কাজ এখনও বাকি রয়েছে। এর মধ্যে কেসিসির নির্বাচন এসে গেছে। এবারও প্রার্থী হয়েছেন তালুকদার আবদুল খালেক। তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরও জলাবদ্ধতার সমাধান করতে পারেননি খালেক। সামান্য বৃষ্টিতে এখনও তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর নিম্নাঞ্চল। প্রধান সড়কগুলোয় তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

এত টাকা ব্যয়ের পরও অল্প বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী। বিশেষ করে আসন্ন বর্ষা মৌসুম নিয়ে দুশ্চিন্তায় সবাই। কেসিসিও কোনো আশ্বাস নগরবাসীকে দিতে পারছে না। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৮ মে থেকে খুলনায় থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে ১৮ মে ১৫ মিলিমিটার, ১৯ মে ৩৫ মিলিমিটার ও ২৪ মে ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর নিম্নাঞ্চল। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত নগরীতে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ বৃষ্টিতেই নগরীর রয়েল মোড়, খানজাহান আলী সড়ক, আহসান আহমেদ রোড, বাস্তুহারা, বাইতিপাড়া, চানমারী, লবণচরা, টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়াসহ নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
স্থানীয়রা জানান, এর আগেও জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়েছে খুলনার মানুষ। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ২০০৮-১৩ সালের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে শতকোটি টাকার ‘নগর অঞ্চল উন্নয়ন’ প্রকল্প নিয়েছিলেন। ওই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন নির্মাণ ও খাল খনন করা হলেও জলাবদ্ধতা দূর হয়নি। এর পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে খালেকের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন।

কেসিসি থেকে জানা গেছে, গত মার্চ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ৫০টি ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়াসহ চলমান রয়েছে ৯১টি প্যাকেজের কাজ। তবে এর মধ্যে ৮৪টি প্যাকেজের কাজ এখনও শুরু হয়নি। কেসিসির গত মার্চ মাসের প্রতিবেদনে প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৪১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। খরচ দেখানো হয়েছে ৩৪২ কোটি টাকা। কেসিসির এক কর্মকর্তা জানান, ড্রেন নির্মাণ হলেও পানি নামার মূল পথের খালগুলো খনন ও সংস্কার করা হয়নি। বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্প হাউস নির্মাণের কাজও শুরু হয়নি। এজন্য জলাবদ্ধতা কমছে না।

কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান সমকালকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন একটা চেইন ওয়ার্ক। সাড়ে চার বছরে অনেক কাজ শেষ হলেও এখনও অনেক কাজ বাকি। বিশেষ করে পাম্প স্টেশন ও স্লুইসগেট সংস্কার করে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরবাসী এর সুফল পাবে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে কাজ শেষ করতে আরও এক বছর লাগতে পারে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিদায়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, এটি ধারাবাহিক কাজ। প্রকল্পের সব শেষ হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না।

কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, নগরীর অধিকাংশ ড্রেনে সংস্কার চলছে। এজন্য বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনে দেরি হচ্ছে। তবে কোনো স্থানে জলাবদ্ধতা হলে কেসিসি পানি অপসারণের ব্যবস্থা করছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ১০ বছর ধরে শুনে আসছি প্রকল্প শেষ হলে সব ঠিক হবে। ইতোমধ্যে ৩০০ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু কোনো সুফল মানুষ দেখতে পায়নি। এখন ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্প চলছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আগে সঠিক পরিকল্পনা জরুরি। অপরিকল্পিত কাজে শুধু টাকা খরচ হবে, মানুষের কোনো উপকারে আসবে না।