আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ সোমবার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জন্য গৌরবময় অধ্যায়। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বশান্তি রক্ষায় চার দশক ধরে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’– জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুসৃত এ আদর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মহান কাজ করছে। শান্তিরক্ষায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছে।   তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ওই সব দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে যে গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছে, তা আমাদের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য পেশাদারিত্ব, সাহস, বীরত্ব ও দক্ষতারই অর্জিত ফসল।

শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সকালে শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৩ উদ্বোধন করবেন। পরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে।

দীর্ঘ চার দশকের শান্তিরক্ষার ইতিহাসে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪০ দেশে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ১৪টি দেশে  ৭ হাজার ৪৩৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে ৫৭২ জন নারী।

শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সর্বমোট ১৬৭ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এ বছর ৫ জন শহীদ শান্তিরক্ষীর পরিবার এবং ৫ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও  মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশ মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। ওই বছর ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক দলে ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় দেশের সাফল্যে নতুন নতুন পালক যুক্ত হয়েছে।

নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। আর নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে ১৯৮৯ সালে শান্তিরক্ষী মিশনে যাত্রা শুরু করে পুলিশ। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী গৌরবের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৩০ জন, নৌবাহিনীর ৬ হাজার ৭০৪ জন, বিমানবাহিনীর ৮ হাজার ৬৪০ ও পুলিশের ২১ হাজার ২৮৪ জন। 

বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, সাইপ্রাস, দক্ষিণ সুদান, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, লিবিয়া ও সুদান– এ সাতটি দেশে বাংলাদেশ পুলিশের ৫১২ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের নারী পুলিশ কর্মকর্তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন।