- বাংলাদেশ
- বেশি দরে ডলার কিনলে দায়ী হবেন কর্মকর্তারা
বেশি দরে ডলার কিনলে দায়ী হবেন কর্মকর্তারা

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ঘোষণার চেয়ে এখনও বাড়তি দরে ডলার কিনছে কিছু ব্যাংক। ১০৮ টাকা ঘোষণা দিলেও ১১১ টাকা পর্যন্ত দরে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে প্রতি ডলার কিনছে তারা। এ ধরনের সাতটি ব্যাংক চিহ্নিত করে তাদের রেমিট্যান্স কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিদেশি মানি রেমিটার কোম্পানির প্রতিনিধিদেরও সেখানে ডাকা হয়। আগামীতে কোনো ব্যাংক বাড়তি দরে ডলার কিনলে সরাসরি দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২১ মে বিএফআইইউর সভাকক্ষে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাড়তি দরে ডলার কেনা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার একটি এবং বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডাকা হয়েছিল। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দুটি ইসলামী ধারার। পাশাপাশি মানিগ্রাম, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মতো মানি রেমিটার কোম্পানির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। দুই পক্ষকে মুখোমুখি করে বাড়তি দরে ডলার কেনার কারণ জানতে চাওয়া হয়। বাড়তি ব্যবসার জন্যই এসব ব্যাংক বাড়তি দরে কেনার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে অভিন্ন দর দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি ব্যাংক তা মানছে না। অনৈতিকভাবে বাড়তি দর দেওয়ায় অন্য ব্যাঙ্ক অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে। সাধারণভাবে ব্যাংকগুলো বাড়তি দরে কেনার বিষয়টির দায় মানি রেমিটার কোম্পানির ওপর চাপিয়ে থাকে। যে কারণে দুই পক্ষকে একসঙ্গে ডাকা হয়।
এর আগে গত ২ এপ্রিল বাড়তি দরে ডলার কেনার বিষয়ে ১১টি ব্যাংকের এমডিকে সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভা থেকে সব ব্যাংকের এমডিকে সতর্ক করেন গভর্নর। এর পরও কয়েকটি ব্যাংক বাড়তি দরে ডলার কেনার তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামীতেও বাড়তি দরে ডলার কেনা অব্যাহত থাকলে আর সতর্ক না করে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জরিমানাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ওই বৈঠকের পর ২৩ মে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) টেকনিক্যাল কমিটি নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে। সেখানে বলা হয়– প্রতিটি ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স সংশ্লিষ্ট আলাদা আলাদা কর্মকর্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন। অথচ ডলার নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলেই ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে দায়বদ্ধ করা হয়। এর আগে ডলারে বেশি মুনাফা করায় ১২টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তখন কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ দফায় যেন এমন না ঘটে, সে বিষয়ে এমডিদের মাধ্যমে তারা অনুরোধ জানাবে।
চাহিদা অনুযায়ী ডলার সরবরাহ না থাকায় ডলারের দর হু-হু করে বাড়তে থাকে। এক বছরে প্রতি ডলারের দর ৮৬ টাকা থেকে উঠে যায় ১১৪ টাকায়। এর পর গত সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ডলারের দর ঠিক করে আসছে ব্যাংকগুলো। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা যৌথ সভা থেকে ডলারপ্রতি ১ টাকা বাড়িয়ে প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৬ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়নের গড় দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করছে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমানে অনেকগুলো দর থাকলেও আগামী জুলাই থেকে সব ক্ষেত্রে অভিন্ন দর চালুর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে গত মার্চ পর্যন্ত আমদানি ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে রপ্তানি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। এর পরও ডলার সংকট না কাটার প্রধান কারণ বিদেশি ঋণ ব্যাপকভাবে কমছে। পরিস্থিতি সামলাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রেকর্ড প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এতে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ওঠা রিজার্ভ কমে গতকাল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। অবশ্য আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় নিট রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো।
মন্তব্য করুন