ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

মশা প্রতিরোধের সরঞ্জামের দামও ‘অপ্রতিরোধ্য’

বেড়েছে ২৫-৩০ শতাংশ

মশা প্রতিরোধের সরঞ্জামের দামও ‘অপ্রতিরোধ্য’

লতিফুল ইসলাম

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩ | ১৮:০০

নিত্যপণ্যের দামের স্রোতে খাবি খাচ্ছে মানুষ। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দামেও ছাড় মিলছে না। এখন ডেঙ্গু মৌসুমে মশা প্রতিরোধের সরঞ্জামের দামও চূড়ায় উঠেছে। মানুষ মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি, কয়েল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম, তেল ও ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তি ব্যবহার করে। দেশের বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, অন্য বছরের চেয়ে এবার ডেঙ্গু ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। গত মে মাসেই দেশে ১০৩৬ জন শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মানুষ আতঙ্কে মশা প্রতিরোধক পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মশারির দাম অন্তত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সিঙ্গেল মশারির পাইকারি মূল্য ২০০-২৫০ টাকা, খুচরা পর্যায়ে তা ৩০০-৩৫০ টাকা। ডাবল মশারি পাইকারিতে ৫০০-৬৫০ টাকা, খুচরায় ৭০০-৭৫০ টাকা। ম্যাজিক মশারির দাম ৩০০ থেকে শুরু করে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। বাচ্চাদের ফোল্ডিং মশারি দেড়শ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

সদরঘাটের হাজী মো. হাবিবুর রহমান অ্যান্ড সন্সের মালিক শেখ আওলাদ হোসেন বলেন, ‘দুই ধরনের মশারি রয়েছে– একটা বাংলা মশারি, অন্যটি ম্যাজিক মশারি। ম্যাজিক মশারির দাম একটু বেশি। আগে যে মশারি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতাম, এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ৩৫০ টাকার মশারি ৫০০ টাকা, ২০০ টাকার ম্যাজিক মশারি ৩০০ টাকা হয়েছে।’ এ ছাড়া মশার কয়েল প্যাকেটপ্রতি খুচরা পর্যায়ে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। জাম্বো কয়েল ৪৫ টাকা প্যাকেট আর বাউমি কয়েল ৯০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

মশা মারতে বেশি ব্যবহার হয় মসকিটো স্প্রে। এর মধ্যে পাইকারিতে ২৫০ গ্রামের স্প্রে ১৬০ থেকে ২০৫ টাকা, ৩৫০ গ্রামের ২৩৫ থেকে ৩০০ টাকা, ৪৭৫ গ্রামের ২৭৪ থেকে ৩৪০ টাকা, ৮০০ গ্রামের ৪০৭ থেকে ৫১৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় এ স্প্রে আরও বেশি দাম। রাজধানীর কাপ্তান বাজারের সুলতান সেন্টারের তুহিন বলেন, ‘বছরখানেক আগে যে দামে আমরা মশার স্প্রে বিক্রি করতাম, তা এখন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।’ এক বছর আগেও ৫০ গ্রাম মসকিটো ক্রিমের দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা থাকলেও এখন তা ১০০ থেকে ১১০ টাকা। আর ১০০ গ্রাম ক্রিমের দাম ১৪০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে।
মশা মারতে ইলেকট্রনিকস র‍্যাকেট বা কিলার ব্যাট, মসকিটো বেস্ট কিলার, মসকিটো বাল্ব, মসকিটো ভ্যাপ্রোজারসহ নানা প্রযুক্তি বের হয়েছে। আমদানি করা এসব ইলেকট্রনিকস পণ্যের দামও বেড়েছে। র‍্যাকেট বা কিলার ব্যাট ৩৫০-৩৮০ থেকে ৪২০-৪৫০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু দেশি প্রতিষ্ঠান আমদানি পণ্য নিজেদের মোড়কে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। মসকিটো বেস্ট কিলার ১ ফুট দৈর্ঘ্যের দাম ৭০০-৭৫০ থেকে ১১০০-১২০০ টাকা। এ ছাড়া ১০০ ওয়াটের মশকিটো বাল্ব ৪০-৫০ থেকে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ারের জনি ইলেকট্রিক অ্যান্ড লাইটিং সেন্টারের মালিক জিয়াউল ইসলাম জনি বলেন, ‘আগে যে মসকিটো কিলার ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি করতাম তা এখন ১১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমদানিকারকরা এখনও ডলার ও এলসি সংকটের কারণে দাম বাড়ার কথা বলছেন।’ মশা প্রতিরোধে মসকিটো ভ্যাপ্রোজার মেশিন ১৪০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। লিকুইড বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত জালের নেট ব্যবহার করেন। এ পণ্যটির দামও বেড়েছে মানভেদে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সমকালকে বলেন, ‘আমাদের দেশে মুদ্রাস্ফীতির চাপ আছে। এর মধ্যেই বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই মশার উপদ্রবের সঙ্গে ডেঙ্গুর আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এর বিপরীতে মশা প্রতিরোধক যেসব পণ্য বাজারে আছে তা যথেষ্ট না। মশা প্রতিরোধক পণ্যসহ প্রতিটি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ বাড়াতে হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক নূরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘মশা পতঙ্গ প্রজাতির প্রাণী। এর প্রতিরোধক কয়েল, স্প্রে, ক্রিম এবং লিকুইড ওষুধের মধ্যে পড়ে কিনা সেটা আমার জানা নেই। আর এসব প্রতিরোধক ওষুধের দাম নির্ধারণের বিষয়টিও জানা নেই।’






আরও পড়ুন

×