- বাংলাদেশ
- ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতেই হবে
ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতেই হবে

ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে গত ১৫ বছরে সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য– বিভিন্ন স্থানে উড়াল সেতু নির্মাণ, বাস রুট র্যাশনালাইজেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ, আন্তঃজেলা বাস স্টেশনগুলো শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও ইউলুপ নির্মাণ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ গঠন ইত্যাদি। এসব উদ্যোগের কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আর কিছু বাস্তবায়নের পথে। এসব কাজের জন্য সরকারের ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য। কিন্তু গত ৯ মে দৈনিক সমকালে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেল, বিস্তর পদক্ষেপ নেওয়ার পরও যানজট কমার পরিবর্তে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‘যানজট ঠেকানোর প্রকল্পে ভজকট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, যানজটের জন্য প্রধানত দায়ী ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যাপক সংখ্যায় চলাচল। এটিকে নিয়ন্ত্রণের বিষয়কে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি না। উল্টো আমাদের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো যেন ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে এবং তা ব্যবহারে উৎসাহিত করছে।
ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধানে নেওয়া কয়েকটি পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। গত ২০ বছরে ৫টি উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন সড়ক এবং তার সঙ্গে ইউলুপ নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে যান্ত্রিক যানবাহন স্বাচ্ছন্দ্যে ও দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারে। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, উড়াল সড়ক অথবা নতুন রাস্তা নির্মাণ– সবই মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে আরও বেশি উৎসাহিত করে। এর পাশাপাশি আমাদের দুর্বল নীতিমালা যেমন যৎসামান্য টাকায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গাড়ি রাখতে দেওয়া, ভিআইপি সড়ক ঘোষণা করা ইত্যাদি। প্রতিটি স্থাপনা যেমন হাসপাতাল, শপিং মল, সরকারি-বেসরকারি অফিস এমনকি বাড়িতেও গাড়ি রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের শর্ত জুড়ে দেওয়ার কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমরা যদি একটি যানজটমুক্ত, সুন্দর ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, অবশ্যই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি উন্নত ও সাশ্রয়ী গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে আশু দৃষ্টি দেওয়া দরকার। আশার বিষয়, মেট্রোরেল করার মাধ্যমে সরকার গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মেট্রোরেলের পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে আমাদের আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন পথচারীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা, অন্যান্য পরিবহন যেমন রিকশা এবং বাস ব্যবস্থার উন্নতি করা, যাতে একজন যাত্রী মেট্রোরেল থেকে নেমে তার গন্তব্যে যেতে পারে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে। সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীদের ওপর কার্বন কর আরোপের চিন্তা করছে। এটি খুব ভালো পদক্ষেপ। আশা করি, আগামী বাজেট থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি অল্প টাকায় রাস্তায় গাড়ি রাখার সুযোগ বন্ধ করে এর ফি আরও বাড়ানো হবে। ঢাকার অনেক রাস্তা ২০ ফুট বা তার চেয়ে কম প্রস্থের। ওইসব রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সহকারী পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন