- বাংলাদেশ
- ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস
ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস

গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত হলেও সহসা মিলছে না স্বস্তি। আগামী এক সপ্তাহ থাকতে পারে এ তাপদাহ। ছবিটি রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানার - মাহবুব হোসেন নবীন
ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল সারাদেশের মানুষ। কোথাও স্বস্তি নেই। ভোর কিংবা রাতেও গরমের তেজ কমছে না। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এমনই দহন জ্বালায় জ্বলছে দেশ। নেই বৃষ্টির দেখা। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় পারদ চড়েছে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ছুটির দিনে সকাল থেকেই তেতে পুড়ে ছিল রাজধানী। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের বাইরে গেলেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ ভ্যাপসা গরম থেকে কবে মুক্তি– আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে সাধারণ মানুষ। কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এ দুর্ভোগ থেকে আপাতত রেহাই মিলছে না। আগামী কয়েক দিনে গরম আরও বাড়তে পারে। তাপপ্রবাহ আরও এক সপ্তাহ চলতে পারে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশজুড়ে বিস্তার ঘটবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর। সেই সঙ্গে মৌসুমি নিম্নচাপ ও ভারী বর্ষণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার আভাস রয়েছে। তবে থাকবে গরমের দাপটও।
দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। শুক্রবার ৩৩ জেলায় এ তাপপ্রবাহ ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গত ৩০ বছরের জলবায়ুগত পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান, দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে মূলত টেকনাফ অঞ্চল দিয়ে। ৩০ বছরের গড় হিসাবে ৩১ মে টেকনাফ, ১ জুন কক্সবাজার, ২ জুন চট্টগ্রাম ও ৪ থেকে ৫ জুন দেশের মধ্যাঞ্চলে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করবে। এই সময়ের কিছু হেরফের হয় বটে। এবারও হয়েছে। টেকনাফ অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটতে আরও তিন দিন দেরি হতে পারে। এর পর দেশের অন্যত্র তা প্রবেশ করবে। তার পরই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ আরও চার থেকে পাঁচ দিন চলতে পারে। এ পাঁচ দিনের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) টেকনাফ উপকূল হয়ে আরও অগ্রসর হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম জানান, এ মাসের ৯-১০ তারিখে বৃষ্টিতে সিলেট ও চট্টগ্রামে তাপপ্রবাহ কমবে। কিন্তু ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে তাপপ্রবাহ আরও এক সপ্তাহ দীর্ঘ হতে পারে।
গত মে মাসের শুরুটাই হয়েছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্য দিয়ে। সপ্তাহ ধরেই চলে গরম। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে দেখা দেয় লঘুচাপ। সেটি নিম্নচাপ থেকে ক্রমে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকায় পরিণত হয়। এ ঘূর্ণিঝড় ১৪ মে কক্সবাজার উপকূল পার হয়। মোকার প্রভাবে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তবে সারাদেশে বৃষ্টিপাত হয় এর দু’দিন পর থেকে। পরে আবার শুরু হয় তীব্র গরম। জুনের শুরুতেও তা অব্যাহত আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশজুড়ে বিস্তার ঘটবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর। সেই সঙ্গে নিম্নচাপ ও ভারি বর্ষণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার আভাস রয়েছে।
এ মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে দু-একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে; এর মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। দেশে চার থেকে ছয় দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। এ ছাড়া জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করবে। তবে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। তিনি বলেন, চলতি মাসে দেশে দু-একটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ (বিচ্ছিন্নভাবে) বয়ে যেতে পারে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
এদিকে প্রচণ্ড গরম মানুষের জীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। তৈরি হচ্ছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ। ঘরে চলছে না ফ্যান বা এসি, বাইরেও ভ্যাপসা গরম। সব মিলিয়ে গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। এত দুর্ভোগের পরও ঝড়-বন্যার মতো তাপদাহকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা হয় না।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এ গরমকে বৈজ্ঞানিকভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বলা হয়। অনেক দেশে এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সতর্কতা জারি করা হয়। প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘর থেকে বের না হন, সে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তা নেই। শীত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বন্যায় সরকার মানুষকে সহায়তা করে। এমন গরমেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারের অনুদান জরুরি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে বলেন, গরমে জীবন ও সম্পর্কের ঝুঁকি সরাসরি দেখা যায় না। ফলে জনগণ উদ্বিগ্ন কম থাকেন, কিন্তু এটার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ফলে তাপপ্রবাহ অবশ্যই বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাপপ্রবাহকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে ভাবছে সরকার।
মন্তব্য করুন