- বাংলাদেশ
- সুশাসন নিশ্চিতের কারণেই আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে
মধুমতি ব্যাংকের ১০ বছর
সুশাসন নিশ্চিতের কারণেই আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে

মো. সফিউল আজম
চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ২০১৩ সালে যাত্রা করে বেসরকারি মধুমতি ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. সফিউল আজম। মধুমতি ব্যাংক ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন অভিজ্ঞ এ ব্যাংকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি
সমকাল: দশ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে মধুমতি ব্যাংক। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই?
সফিউল আজম: ২০১৩ সালের ৪ জুন মধুমতি ব্যাংক লাইসেন্স পায়। অবশ্য বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় একই বছরের সেপ্টেম্বরে। ব্যাংক ব্যবসা চলে সম্পূর্ণ আস্থার ওপর। দশ বছরের পথ চলায় আমরা ৪ লাখ ৫২ হাজার গ্রাহকের আস্থার ব্যাংক। আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো দক্ষ ও স্বচ্ছ পরিচালনা পর্ষদ। দেশের অনেক ব্যাংক শুধু এই জায়গায় সমস্যার কারণে ঝামেলায় পড়েছে। আমাদের পর্ষদ শুরু থেকেই গুণগত মানের ভালো ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে নীতি প্রণয়নে সহায়তা করেছে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্বাধীনভাবে ব্যাংক পরিচালনা করছে।
সমকাল: আপনারা যে লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার কতুটকু পূরণ হয়েছে?
সফিউল আজম: চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরুর সময় ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিশাল জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মধুমতি ব্যাংক। সে লক্ষ্য পূরণে বর্তমানে ৪৮টি শাখা এবং ৬০০ এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এজেন্ট পয়েন্টে আমরা নিত্যনতুন ফিচার যোগ করে চলেছি। এখানে শুধু অ্যাকাউন্ট খুলবে তেমন নয়। এজেন্ট পয়েন্ট থেকে রেমিট্যান্স উত্তোলন ও কৃষিঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। টেলিমেডিসিন সেবা এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাভোগীর কাছে ভাতা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার ৭টি শাখার মাধ্যমে উদ্যোক্তা গড়ে তোলার কাজ করা হচ্ছে।
সমকাল: নতুন বছরে আপনাদের পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলুন।
সফিউল আজম: প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পরিচ্ছন্ন ইমেজের ব্যাংক হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ব্যাংকের প্রাণ হলো গ্রাহক। তাঁদের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বর্ষর্পূতি উপলক্ষে নতুন করে কয়েকটি প্রডাক্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কো-স্মার্ট নামে ক্ষুদ্র গ্রাহকদের জন্য একটি অ্যাপ রয়েছে। এখন ‘মধুমতি স্মার্ট’ উদ্বোধন করা হবে। এর মাধ্যমে করপোরেটসহ সব গ্রাহক ঘরে বসে ব্যাংকিং করতে পারবেন। প্রবাসীদের জন্য ‘জন্মভূমি’ নামে একটি সেবা চালু হচ্ছে। যেখানে প্রবাসীরা অ্যাকাউন্ট খুলে বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। চালু হতে যাওয়া মধুমতি ‘স্বাচ্ছন্দ্য’র মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট মালিকরা হিসাব খুললে বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। আধুনিক সেবার পাশাপাশি প্রযুক্তিকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সমকাল: ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনারা কোন বিষয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?
সফিউল আজম: শুরু থেকেই নন-ফান্ডেড ব্যবসায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ফি-ভিত্তিক আয় থেকে যেন অন্তত প্রশাসনিক ব্যয় উঠে আসে সে চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া রপ্তানি ব্যবসায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ভালো বিষয় হলো, আমদানির চেয়ে এই ব্যাংকের রপ্তানি বেশি। গত বছর এই ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি আয় এসেছে ৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আমদানি হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
সমকাল: ব্যাংক খাতের অন্যতম সমস্যা খেলাপি ঋণ। আপনারা তো এ ক্ষেত্রে অনেক স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
সফিউল আজম: ব্যাংক ব্যবসার মূল বিষয় আস্থা। আস্থা অর্জনে সবার আগে জোর দিতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনে। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ক্লিন ইমেজের অধিকারী থাকতে হবে। ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদের ভাবমূর্তি এবং কর্মকাণ্ড স্বচ্ছ হতে হবে। মধুমতি ব্যাংক শুরু থেকেই এসব বিষয়ে জোর দিয়েছে। মূলধন পর্যাপ্ততা রয়েছে ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২২ সাল শেষে মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমেছে। ব্যাংক খাতের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। এটা সম্ভব হয়েছে বেশ কিছু কারণে। প্রথমত, আমরা আগ্রাসী ব্যাংকিং করি না। ঋণখেলাপি থেকে বাঁচার জন্য শুরু থেকেই আমরা গ্রাহক সিলেকশনে যত্নবান। আবার কাকে ঋণ দিতে হবে তা নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
সমকাল: উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের এ সময়ে আপনার পরামর্শ কী?
সফিউল আজম: দেশের অর্থনীতিতে প্রথম ধাক্কা এসেছিল ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর। তখন সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো পৃথিবী ধাক্কা খেয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশের অর্থনীতি বা ব্যাংক ব্যবস্থায় তার একটা প্রভাব পড়েছে। অবশ্য অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানোসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে হয়তো অনেক বড় সংকট তৈরি হয়নি। এ সময়ে সবাইকে সহনশীল ও কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা না নিয়ে কৃষি এবং দেশীয় উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
মন্তব্য করুন