
শালগাছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো অর্কিড। গজনী, শেরপুর - ফকির শহীদ
দেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে রাঙামাটি, আবার রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি। এই তিন জেলার বন-প্রান্তরে ছুটতে ছুটতে কত অসাধারণ দৃশ্য দেখেছি– তার কোনো হিসাব নেই। সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছি অচেনা কোনো ফুল দেখে। আবার কিছু দৃশ্য হতাশও করেছে। কয়েক বছর পর যথাস্থানে গিয়ে গাছটি না দেখার মতো বিষয়গুলো অনেক পীড়া দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি পীড়াদায়ক চিত্র অর্কিড নিয়ে। এসব অর্কিডের মধ্যে অন্যতম পেন্সিল অর্কিড। অধিকাংশ সময় পুরোনো গাছের ডালপালায় সরু পেন্সিলের মতো সুদৃশ্য গাছগুলোই দেখেছি। ফুল চোখে পড়েছে কম। এর কারণ হলো, বর্ষার প্রথম দিকে বা গ্রীষ্মের শেষ দিকে ফুলের মৌসুমে না যাওয়া।
সম্প্রতি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত শালবন বেষ্টিত পাহাড়ে অর্কিডটি আবার দেখার সুযোগ হলো। একটি মৃত শালগাছে অনেক অর্কিড। তা ছাড়া বনের ভেতর অন্যান্য গাছেও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। এটি সিঙ্গাপুরের জাতীয় ফুল এবং সেখানে ‘ভ্যান্ডা মিস জোয়াকুইম’ নামে পরিচিত। তবে গারো পাহাড়ে স্থানীয়ভাবে পেন্সিল অর্কিড নামে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই পাহাড়ে নানান প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদের স্থানে প্রায়ই যাওয়া হয়। এই বনের ফুল-পাখি পর্যবেক্ষণ করার একটি দল আছে। সেই দলের অন্যতম সদস্য প্রকৃতিপ্রেমী ফকির শহীদ বনে ঘুরে ঘুরে এই অর্কিডগুলো দেখালেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ গ্রন্থের তথ্যমতে, এই অর্কিড সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে এখন শেরপুরের রেকর্ডও যুক্ত হতে পারে।
এরা (Papilionanthe teres) বৃক্ষাশ্রয়ী এবং হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ে ওঠা এক ধরনের বীর্নৎ শ্রেণির গাছ। মূল পাতা ৪ মিলিমিটার প্রস্থ, দেখতে অনেকটা সরু কাঠির মতো। দু’পাশ থেকে বেশ ভালোভাবে মোড়ানো, মাঝখানটা লম্বালম্বিভাবে ফাঁক করা। শাখান্বিত কাণ্ড মাংসল, সরু নলের মতো এবং বৃত্তাকার, ৮ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। মঞ্জরিপত্র প্রতিমুখ এবং ৩ থেকে ৬টি ফুলবিশিষ্ট। মঞ্জরিদণ্ড শৈলশিরা বিশিষ্ট এবং সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৮ সেন্টিমিটার লম্বা। পুষ্পক মঞ্জরিপত্র ডিম্বাকার। ৪ থেকে ১০ সেন্টিমিটার চওড়া ফুলগুলো সুগন্ধি, দীর্ঘস্থায়ী এবং আড়াআড়িভাবে থাকে। পাপড়ির রং সাদা থেকে গোলাপি এবং মাথার দিকটা গাঢ় বেগুনি বা গোলাপি এবং স্পষ্ট শিরাযুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় গোলাকার, কিনারা ঢেউ খেলানো এবং গোড়ার দিকটা পাকানো ধরনের। ফুল ও ফলের মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল।
বাংলাদেশ ছাড়াও এই অর্কিড লাওস, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ চীন থেকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, নেপালের পূর্বাঞ্চল, ভুটান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যান্য অর্কিডের মতো এটি তুলনামূলকভাবে বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় ভালোভাবে জন্মে। অর্কিডটি সর্বপ্রথম ১৯১৫ সালে রেকর্ড করা হয়।
মন্তব্য করুন