- বাংলাদেশ
- ভোটের মাঠে হুমকিতেও অটল বিএনপি নেতারা
রাজশাহী সিটি নির্বাচন
ভোটের মাঠে হুমকিতেও অটল বিএনপি নেতারা

চলমান কোনো নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। ফলে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মেয়র পদে দলটির কেউই মনোনয়ন ফরম তোলেননি। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫ জন। তাঁদের সবাই বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের সাবেক পদধারী নেতা। কেউ কেউ এখনও দলীয় পদে রয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী প্রচারণাও চালাচ্ছেন নিয়মিত। এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। দল থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। গত রোববার রাতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা ও সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে বহিষ্কার হলেও ভোটের মাঠ থেকে সরবেন না বিএনপির এই নেতারা। শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে মাঠে থাকতে চান তাঁরা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাঁচজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা সবাই নির্বাচনে থাকার ব্যাপারে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা হচ্ছেন– ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বদিউজ্জামান বদি, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু বকর কিনু, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ মখদুম থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. টুটুল, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ মখদুম থানা বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান লিটন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি বেলাল হোসেন, একই ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক রনি হোসেন রুহুল, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটু, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা রিপন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আলিফ আল মাহমুদ লুকেন, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আনোয়ারুল আমিন আজব এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে মতিহার থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আশরাফুল হাসান বাচ্চু।
এ ছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন পাঁচজন। ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুসলিমা বেগম বেলী; ৯, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আলতাফুন নেসা পুতুল; ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক সামসুন নাহার; ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের সহসভাপতি শাহনাজ বেগম শিখা এবং ২৫, ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক আয়েশা খাতুন মুক্তি।
বিএনপির নির্দেশনা উপেক্ষা করে কেউ ভোটে অংশ নিলে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘোষণা আগেই দিয়েছে বিএনপি। গত ২১ মে রাজশাহীতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতাকর্মীকে সতর্ক করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। সে সময় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। দলের কেউ কিংবা দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তাঁকে দল থেকে আজীবনের মতো বহিষ্কার করা হবে।
তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানান। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আলিফ আল মাহমুদ লুকেন বলেন, আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি এবং শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে মাঠে থাকব। ওয়ার্ডবাসী আমাকে চাচ্ছেন তাই ভোটে অংশ নিয়েছি। তাঁরা আমার পাশে আছেন। বিএনপির বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে থাকছি এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিএনপি নেতা বলছেন, আমি তো বিএনপির হয়ে মনোনয়ন তুলিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ভোটের মাঠও ভালো। এর আগেও দল নির্বাচন বয়কট করেছে কিন্তু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়নি। নির্বাচন বয়কট করলে তারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছে। বিনা ভোটে কাউকে জনপ্রতিনিধি হতে দেওয়া যায় না। দল বহিষ্কার করলেও আমি নির্বাচন করব।
সার্বিক বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, দল বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেবে না। সেজন্য সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সব নির্বাচন বয়কট করেছে। একই সঙ্গে এই নির্বাচনে অংশ না দিতে নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এখানে ১৬ জন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের সিদ্ধান্ত না মানার কারণে তাদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে। এখন কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্য করুন