কসমেটিকস পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, আমদানি-রপ্তানি, বিক্রি এবং সংশ্লিষ্ট ‍বিষয়ে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধের ক্ষমতা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) ওপর ন্যস্ত। কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন ওষুধ আইনে এ দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে। আইনটি এখনও পাস না হলেও এরই মধ্যে কসমেটিকস পণ্যের মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে পক্ষ নিয়েছেন বিএসটিআইর। শিল্পমন্ত্রী খোদ চিঠি পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির কাছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

বিএসটিআইর কর্মকর্তাদের অভিযোগ, কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন ওষুধ আইন প্রস্তুত করেছে। কসমেটিকস পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনকে দেওয়া হলে এ-সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য বিএসটিআইতে স্থাপিত পরীক্ষাগারগুলো অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি পরীক্ষাগারগুলো হারাতে পারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। এ ছাড়া বিএসটিআইর মতো পরীক্ষাগার স্থাপনসহ এর জন্য অ্যাক্রিডিটেশন অর্জন করতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হবে।  
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নকল প্রসাধনী বাজারজাত বন্ধ এবং কসমেটিক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কসমেটিকস পণ্যের নিবন্ধন ও নবায়নের দায়িত্ব রাখা হয়েছে ঔষধ প্রশাসনের অধীনে। সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই যার যার সিদ্ধান্ত ও নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

জানা গেছে, ওষুধ ও কসমেটিকস আইন সংশোধনের দাবিতে গত ৫ এপ্রিল শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে চিঠি পাঠান। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসটিআই কসমেটিকসহ বিভিন্ন পণ্যের মান প্রণয়ন ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা বিধানে কাজ করছে। নিরাপদ কসমেটিক পণ্য নিশ্চিত করতে বিএসটিআই পাঁচটি গাইডলাইন ও শতাধিক মান প্রণয়ন করেছে। ২৭টি কসমেটিক পণ্য সরকার বাধ্যতামূলক পণ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালের প্রস্তাবিত ওষুধ ও কসমেটিক আইনে কসমেটিকের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে। আইনটি অনুমোদিত হলে বিএসটিআইর কাজকর্মে সমস্যা তৈরি হবে।

এর আগে গত ২ মার্চ মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) নেতারা আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ওষুধ ও প্রসাধনী দুটি ভিন্ন পণ্য হওয়ায় এর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ভিন্ন হবে– এটা স্বাভাবিক। ভারতসহ অন্যান্য দেশে ওষুধ ও কসমেটিকস আলাদা বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা হয়। আমাদের দেশেও একইভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসছিল। তবে হঠাৎ আলোচনা ছাড়া ওষুধ আইনে কসমেটিকস সম্পর্কিত ধারা রাখা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়।
বিএসটিআইর দাবি, বিজনেস অব অ্যালোকেশন অনুযায়ী কসমেটিকস পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আওতাবহির্ভূত। খসড়া আইনে কসমেটিকসকে যুক্ত করা হলেও এ বিষয়ে বিএসটিআইর মতামত নেওয়া হয়নি। বিএসটিআইর মহাপরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, নতুন ওষুধ আইনের মধ্যে কসমেটিক শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে; যার কপি শিল্প মন্ত্রণালয় বা বিএসটিআইকে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া কসমেটিক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের কাছ থেকেও নেওয়া হয়নি মতামত। এর আগেও অনেকবার এমন চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এ আইন পাস হলে বিএসটিআই ও ঔষধ প্রশাসনের মধ্যে নানা জটিলতা সৃষ্টি হবে।

একই বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যার যার নিয়ম ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে। এতেও নতুন কোনো জটিলতা তৈরি হলে সেটা সমাধান করা হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কসমেটিকস মানুষ শরীরে-মুখে মাখেন। কসমেটিকসে যদি ক্ষতিকর উপাদান থাকে, তাহলে মানুষের ক্ষতি হয়। যেসব কারণে মানুষের ক্ষতি হয়, তা আমরা দেখব। সামনে যে সংসদীয় কমিটির বৈঠক হবে, তাতে কসমেটিকস প্রতিনিধিদের ডাকার কথা বলব আমি।

এদিকে, কসমেটিকস পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তা সমাধান করে ফার্মেসি আইন, ২০২৩-এর খসড়া চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে কাল বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।