‘সাড়ে ৪ হাজারে নিলে নিয়া যান, ঘুইরা আইলেই দাম হইব ৫ হাজার টাকা’– রাজধানীর গুলিস্তানে পাইকারি ইলেকট্রনিক্স মার্কেট সুন্দরবন স্কয়ারে চার্জার ফ্যান বিক্রির সময় ক্রেতাকে এভাবেই ‘দামের ভয়’ দেখাচ্ছিলেন বিক্রয়কর্মী।

দেশজুড়ে বইছে তাপপ্রবাহ, সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং। সব মিলিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ প্রেক্ষাপটে বাজারে ইলেকট্রনিক্স চার্জার ফ্যান, এয়ারকুলার, আইপিএস, সোলার ব্যাটারি, সাধারণ ফ্যানের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গেছে। এ সুযোগে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম দেখিয়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ইলেকট্রনিক্স এসব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা।

পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, ইলেকট্রনিক্স এসব পণ্য ডিসেম্বরে শীতের মধ্যেই আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন গুদামে ফ্যান মজুত থাকার পরও বাজারে তা ছাড়ছেন না। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে অনেক কম পরিমাণে ফ্যান বাজারে দিচ্ছেন।

সোমবার দুপুরে সুন্দরবন স্কয়ারের সামনে কথা হয় বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের মিজান ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে লোডশেডিং। মানুষ গরম থেকে বাঁচতে এখন চার্জার ফ্যান কিনছেন। দোকানে যা ফ্যান ছিল কালকেই শেষ হয়ে গেছে। সকালে নতুন ফ্যান কিনতে নবাবপুর ও সুন্দরবন স্কয়ারে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে গরম বাড়ার গতির চেয়ে ফ্যানের দামের গতি বেশি। গতকাল দোকানে ১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যান বিক্রি করেছি সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে এই ফ্যান এখান থেকেই পাইকারি ২ হাজার ৭০০ টাকায় নিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আজকে মার্কেটে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ। সকালে এক দোকানে ফ্যানের দাম ৪ হাজার ২০০ টাকা চেয়েছিল। সে সময় ফ্যান না নিয়ে ১০ মিনিট পর ওই দোকানে গেলে বলে, সেই ফ্যান নেই। তবে তার দোকানেই থরে থরে সাজানো ছিল ফ্যান। পরে ওই দোকান থেকেই ৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে ফ্যান নিয়েছি। বৃষ্টির আগে এ ফ্যান বিক্রি হলেই ভালো, না হলে কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রি করতে হবে।’

সুন্দরবন স্কয়ারের ভেতরে নিচতলার পাইকারি মার্কেটে তখন দোকানিদের দম ফেলারও ফুরসত নেই। মার্কেটের নিচতলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খুচরা বিক্রেতারা পণ্য কিনে বড় কার্টনে ভরছেন, কেউবা দোকান ঘুরে ঘুরে পণ্যের দাম দেখছেন। এরই মধ্যে এক বিক্রয়কর্মী খুচরা বিক্রেতাদের উদ্দেশে চেঁচিয়ে বলছিলেন, ‘কালার দেখানোর সময় নাই। নিলে নেন, না নিলে দোকানের সামনে থেকে সরেন।’ অন্য সময় এ মার্কেটে সব ধরনের খুচরা ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রি হলেও এখন শুধু চলছে ফ্যান কেনাবেচা। দোকানে দোকানে সব ধরনের ফ্যান থাকলেও মিনি চার্জার ফ্যান, মুভিং ফ্যান, নেক ফ্যানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর বাসাবাড়ির জন্য বেশি বিক্রি হচ্ছে ১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যান।

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিনি চার্জার ফ্যান এখন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এ ফ্যানই সপ্তাহখানেক আগে ছিল ১৬০ টাকা। মুভিং ফ্যানের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৯০০ টাকা, নেক ফ্যান  ৫০০ টাকা,  আগে ছিল ৩২০ টাকা। ৭.৫ ইঞ্চি ফ্যানের বর্তমান দাম ২ হাজার টাকা, এক সপ্তাহ আগে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কেনা যেত। ১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যানের দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। ১৪ ইঞ্চি ফ্যানের দাম ৬ হাজার ২০০ টাকা, আগে ছিল ৪ হাজার ১০০ টাকা। ১৬ ইঞ্চি ফ্যানের দাম ৬ হাজার ৪০০ টাকা, আগে ছিল ৪ হাজার ৪০০ টাকা।

পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, কুলিং ফ্যানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকলেও বাজারে নেই। আমদানিকারকরা বাজারে দিচ্ছেন না। মাঝারি সাইজের কুলিং ফ্যান ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোলার প্যানেল, ব্যাটারি, লাইট, আইপিএস একসঙ্গে ১২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ড্রিম গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্সের ইমরান বলেন, ‘ক্রেতার চাপ যেমন আছে, তার চেয়ে বেশি দামের চাপ। এখন প্রতিদিন দেড় থেকে ২০০ টাকা করে দাম বাড়ছে।’ আরিফা ইন্টারপ্রাইজের আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমদানিকারকরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফ্যানের দাম বাড়াচ্ছেন। তাই আমরাও বাধ্য হয়ে দাম বাড়াচ্ছি। সকালে যে পণ্য নিয়ে এসেছি, তা দুপুরের আগে শেষ, দুপুরেরটা বিকেলে। এক ঘণ্টা আগে যে দামে কিনতে পেরেছি পরে সেই দামে আর পাওয়া যাচ্ছে না।’

সোলার ফ্যান ও আইপিএসের পাইকারি বিক্রেতা পাবনা ইলেকট্রনিক্সের সুমন বলেন, ‘বাজারে সোলার ফ্যানসহ ব্যাটারি প্যানেল ও আইপিএসের চাহিদা প্রচুর। তবে সে তুলনায় পণ্য নেই।’

এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার লাইটের চাহিদাও বেড়েছে। বিভিন্ন ভোল্টের চার্জার লাইট ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চার্জার লাইটের সঙ্গে মোমবাতি বিক্রিও বেড়েছে। ঠাঁটারিবাজারের পাইকারি বিক্রেতা হিমেল অ্যান্ড ব্রাদ্রার্সের আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এখন বাজারে অনেক চার্জার লাইট আছে। তাই আগের মতো মোমবাতি বিক্রি হয় না। তবে লোডশেডিং বাড়ায় এখন মোমবাতি বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।’