কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সঙ্গত, টেকসই, জলবায়ু সহিষ্ণু করে তোলা এবং সবার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্য অধিকার ও কৃষি খাদ্যব্যবস্থা সম্মেলন ২০২৩’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী সিনেট ভবনে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপটে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে পিকেএসএফ, অক্সফ্যাম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইন্টারন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি নেটওয়ার্ক-আইএফএসএন, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, কেয়ার, ব্র্যাক, ওয়ার্ল্ড ভিশন, একশনএইড, ক্রিশ্চিয়ানএইড, নেটজ বাংলাদেশসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং নেটওয়ার্ক রয়েছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত আয়োজনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। তিনি বলেন, কৃষিখাদ্য ব্যবস্থা একটি সামগ্রিক ও বহুমাত্রিক ব্যবস্থা, যেখানে বিস্তৃত পরিসরে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিভিন্ন অংশীজন অন্তর্ভুক্ত থাকে। এ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিককে নির্দেশ করে যা খাদ্য, জমি, পানি, পুঁজি, যোগান, প্রযুক্তি, বাজারে ন্যায়সঙ্গতভাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের কারণে বেঁচে থাকা এবং ব্যবস্থাগত রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সন্নিবেশিত করে। 

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা দ্বারা প্রস্তাবিত নিওলিবারেল মতাদর্শ বাণিজ্য এবং কৃষি সংক্রান্ত চুক্তির দ্বারা পরিচালিত শিল্প ও কৃষিখাদ্য ব্যবস্থা ভূমি দূষণ, বন উজাড়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, পানির ঘাটতি এসব বৈষম্য এবং খাদ্য আমদানি বাড়ায়। বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো টান্সজেনিক বীজের ব্যবহারকে একচেটিয়া করে এবং চাপিয়ে দেয়। প্রতি বছর, বহুজাতিক কৃষি ব্যবসার দ্বারা লাখ লাখ জীবিকা নির্বাহকারী কৃষককে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান নয়া উদারাবাদী যুগে খাদ্য অধিকার ও পুষ্টি নিরাপত্তা ও কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা বিষয়ে দৃঢ় সমর্থন একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এই প্লাটফর্ম এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নাগরিক সমাজ ও আন্দোলনগুলোকে তাদের ইস্যু, উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং এটি হতে পারে মানুষের ধারণা, মতামত, কৌশল এবং কার্যক্রম বিনিময়ের একটি ক্ষেত্র। এ অঞ্চলের নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর দৃঢ় অঙ্গীকার, সম্পৃক্ততা এবং ঐক্য লাখ লাখ মানুষের খাদ্য অধিকার এবং পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন ও কৃষি খাদ্যব্যস্থা ও এর পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।

নেটওয়ার্ক ও পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সবগুলো অঞ্চল নিয়ে আমরা কাজ করি। তবে সব অঞ্চলের বাস্তবতা এক নয়। কৃষি আইন ও নীতি বাস্তবায়নে ঘাটতি হয়েছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে অনেক সমস্যা সমাধানের বিষয়গুলো উঠে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইতোমধ্যে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের সহস্রাধিক সংগঠন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ৭ থেকে ২০ জুন দেশব্যাপী প্রচারাভিযান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। 

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২৬ ও ২৭ জুলাই সকাল সাড় ৯টা থেকে মোট ২টি প্লেনারি ও ১০টি কারিগরি অধিবেশনে খাদ্য অধিকার ও কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের উপস্থাপনা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে যেসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অধিবেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আইনি এবং নীতি কাঠামোকেন্দ্রিক খাদ্য অধিকার ও পুষ্টি পরিস্থিতি; খাদ্য অধিকার দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আইনি ও নীতি কাঠামো; সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি এবং খাদ্য নিরাপত্তা; খাদ্যের অধিকার আদায়ের জন্য কৃষিখাদ্য ব্যবস্থা এবং এর রূপান্তর; কৃষি খাদ্য ব্যবস্থায় পরিবেশগত সংকট এবং জলবায়ুর টেকসই এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি খাদ্য ব্যবস্থায় পারিবারিক কৃষিকাজের ভূমিকা; কৃষিখাদ্য ব্যবস্থায় গ্রামীণ ভূমিহীনতা এবং ভূমির মেয়াদের নিরাপত্তাহীনতার প্রভাব; জলবায়ু সহনশীল কৃষি খাদ্য ব্যবস্থায় পারিবারিক কৃষিকাজের ভূমিকা; ক্ষুদ্র কৃষক হিসেবে অর্থ এবং বাজারব্যবস্থায় নারী ও তরুণদের অভিগম্যতা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নেটওয়ার্কের ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অমিত দে, আহমেদ বোরহান প্রমুখ। প্রসঙ্গত খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ -এর ওয়েবসাইট- https://rtfbangladesh.org এবং ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/Rightto FoodBangladesh) কনফারেন্সের আপডেট জানানো হবে।