- বাংলাদেশ
- চট্টগ্রামে ম্যানগ্রোভ বন কেটে পার্ক বানাচ্ছে জেলা প্রশাসন
চট্টগ্রামে ম্যানগ্রোভ বন কেটে পার্ক বানাচ্ছে জেলা প্রশাসন
কাটা পড়েছে কেওড়া, বাইন, গেওয়াসহ কয়েক হাজার বড় গাছ

চট্টগ্রাম মহানগরীর অদূরে সীতাকুণ্ডের কাট্টলী উপকূলে সাগরের তীরে জেগে ওঠা চরে বন বিভাগের সৃজন করা ম্যানগ্রোভ বন কেটে সেখানে ডিসি পার্ক তৈরি করছে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে কেওড়া, বাইন, গেওয়াসহ কয়েক হাজার বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বন বিভাগের চট্টগ্রাম সদর রেঞ্জ। গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের সঙ্গেও কোনো আলোচনা করা হয়নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রশাসন বলছে, বন ধ্বংস নয় বরং অবৈধ দখলে থাকা খাস খতিয়ানভুক্ত বালুচর উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে পাখির অভয়ারণ্য তৈরির জন্য ১০ হাজার নতুন গাছ লাগানো হবে। এ ছাড়া পর্যটকের জন্য তৈরি করা হবে ওয়াচ টাওয়ার।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুর মৌজার অধীন উত্তর কাট্টলীর কালু শাহপাড়াসংলগ্ন সাগরপাড়ের চরে ছিল এই ম্যানগ্রোভ বন। স্থানীয়রা জানান, এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন চরের একপাশ টিনের বেড়ায় ঘেরাও করে গাছ কাটার পাশাপাশি তিনটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটছে। পার্শ্ববর্তী সড়কে ‘ডিসি পার্কের উন্নয়ন কাজ চলছে’ সাইনবোর্ড বসিয়ে মানুষের আসা-যাওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম উপকূলীয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুর রহমান বলেন, সাগরপাড়ের চরে বন বিভাগ ম্যানগ্রোভ বন সৃজন করেছিল। উপকূলীয় এলাকায় সৃজিত বনের মালিকানা বন বিভাগের। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে জেলা প্রশাসন উপকূলীয় বন কেটে ফেলছে। গত সোমবার সরেজমিন পরিদর্শন করে পুরো বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। গোটা চর টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে গাছ কাটা, মাটি কাটা ও জমি সমতল করার কাজ চলছে।
বন বিভাগ চট্টগ্রাম সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসন পার্ক করার জন্য গত শনিবার গাছ কাটা শুরু করেছে। সেখানে আমাদের সৃজিত বনের বহু কেওড়া, বাইন ও গেওয়া গাছ কেটে ট্রাকে করে নিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ১ হাজার ২২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের বন কেটে ফেলা হয়েছে। মাটি কাটা হচ্ছে। ১২টি বড় কেওড়া গাছ এবং কয়েক হাজার বাইন ও গেওয়া গাছ কাটা হয়েছে। কেওড়া গাছের ৪০টি টুকরো উদ্ধার করেছি আমরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, উত্তর কাট্টলীর জায়গাটি অবৈধ দখলে ছিল। ওই এলাকার ১৯৪ একর জমি দখলমুক্ত করে আমরা ডিসি পার্ক করছি। সেখানে ওয়াচ টাওয়ার ও পাখির অভয়ারণ্য হবে। সে জন্য আট থেকে দশ হাজার ফলদ ও বনজ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ওই জায়গা জেলা প্রশাসনের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। সেখানে রাস্তা করার জন্য নিয়ম মেনে মাটি কাটা হচ্ছে। বনের কোনো গাছ কাটা হয়নি।
কাট্টলী উপকূলে ছলিমপুর মৌজায় ২০০ হেক্টরের মতো উপকূলীয় বন রয়েছে। সাগরে জেগে ওঠা চরে ১৯৮৩-৮৪ এবং পরে ১৯৯৮ সালে দুই ধাপে ওই ম্যানগ্রোভ বন সৃজন করে উপকূলীয় বন বিভাগ। পরে বন আইনের ৪ ধারায় এসব ম্যানগ্রোভকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়।
মন্তব্য করুন