- বাংলাদেশ
- জাবিতে অনশনকারী প্রত্যয়সহ কয়েকজনকে মারধর ছাত্রলীগের
জাবিতে অনশনকারী প্রত্যয়সহ কয়েকজনকে মারধর ছাত্রলীগের
-samakal-647f8f908fe03.jpg)
ছবি: সমকাল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম বিলুপ্তিসহ ৩ দাবিতে অনশনকারী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ কয়েকজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রত্যয়কে মারধরের পর জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্ব্যুলেন্সে করে মেডিকেলে নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকেও মারধর করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগকর্মীরা। এসময় প্রত্যয়কে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক গৌতম কুমার দাস এবং কার্যকরী সদস্য গোলাম রাব্বীর নেতৃত্বে এ হামলা হয়। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী। গৌতম ও রাব্বি ছাড়াও হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য মুরসালিন, সহ-সম্পাদক সোহেল ও তারেক মীর এবং মুরাদ, নোবেল, তানভীর রায়হান, রাহাত, সৌমিক, সজীব, নাফিসসহ আরও কয়েকজন ছিলেন বলে জানা গেছে।
মারধরের শিকার সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী বলেন, ‘ইলেকট্রিসিটি না থাকার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করা হয়েছে। এসময় আমাদের সঙ্গে থাকা মেয়েদের শ্লীলতাহানি এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘গণরুম-গেস্টরুম প্রথা ও অছাত্রদের হলে অবৈধ অবস্থানের প্রতিবাদে অনশনরত শিক্ষার্থী প্রত্যয়ের অনশনস্থলে হামলা করেছে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ ও অবৈধ শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর রাতের অন্ধকারে এই হামলা চালানো হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচিসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন।’ এছাড়া একাধিক মেয়ে শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে কর্মরতরা জানান, তাদের কাছে ফোন কল আসে মীর মশাররফ হোসেন হলে একজন অসুস্থ, অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে হবে। কে কল দিয়েছিলেন তারা তা জানেন না। পরে জানা যায়, যে ফোন নম্বর থেকে কল আসে সেই নম্বরটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. আনিস গণমাধ্যমকে বলেন, “একটা ছেলেকে নিয়ে আসা হয়। যার নাম প্রত্যয়। যখন তাকে নিয়ে আসা হয় তখন তিনি বার বার বলছিলেন, ‘আমাকে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি আসতে চাইনি। ওরা আমাকে মারধর করে জোর করে নিয়ে এসেছে।’ পরবর্তীতে তাকে আমরা চিকিৎসা দিতে চেয়েছি তবে সে চিকিৎসা সেবা নেয়নি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকর না, বডিগার্ডও না। ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।’
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা। পরে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ৫ দাবিতে অবস্থান নেন। এগুলো হলো এমএইচ হলে অবস্থানরত সকল মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সূর্য ওঠার আগে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সব হল থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে হবে। ছাত্রী নিপীড়ন ও হামলাকারীর প্রত্যেককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে উপাচার্যকে বাদী হয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করতে হবে। প্রক্টর এবং প্রভোস্টকে অব্যাহতি দিতে হবে। গণরুম গেস্টরুম সংস্কৃতির অবসান করতে হবে। প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সিটের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রত্যয় গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অবস্থান নেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচের) ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র।
মন্তব্য করুন