
খুলনা সিটি নির্বাচন জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায়। মেয়র প্রার্থীরা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁরা নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রচারণায় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও সদ্য বিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক গত মঙ্গলবার ‘স্মার্ট খুলনা’ গড়ে তোলাসহ ৪০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ড্রেন পরিষ্কার, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও নিরাপদ স্বাস্থ্যকর খুলনা, সূর্যোদয়ের আগেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন।
এ ছাড়া তাঁর প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে– বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উপযোগী নগরী গড়ে তোলা, হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে সেবার মান বৃদ্ধি, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, কেসিসিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, খুলনা মহানগরীর সম্প্রসারণ প্রভৃতি।
খালেক সমকালকে বলেন, আমার আগের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে ভোটাররা যদি আমাকে আবারও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেন, তাহলে সবার সহযোগিতায় খুলনাকে উন্নত, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত আধুনিক স্মার্ট নগর হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
গত ২৮ মে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল। ইশতেহারে তিনি খুলনাকে আন্তর্জাতিক মানের এবং আধুনিক ও ‘শান্তির নগরী’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি পায়ে চালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ, হালকা যানবাহনগুলোর লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা, হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০ শতাংশ মওকুফ ও ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা, সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হতে যাওয়া নতুন এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আউয়াল তাঁর ইশতেহারে পতিতাবৃত্তি, ব্যভিচার, লিভ টুগেদার ও নারী উত্ত্যক্ত প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলেন। এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা– এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, তিনি শান্তির নগরী গড়ে তুলতে চান। নির্বাচিত হতে পারলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবেন।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু নির্বাচনী প্রচারণায় খুলনাকে ‘উন্নয়নের নগরী’ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে তিনি এখনও ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তিনি সমকালকে বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে নগরীতে জলাবদ্ধতাসহ বড় সমস্যাগুলো নিরসন করব।
জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন বুধবার আইনজীবী সমিতিতে গণসংযোগকালে সমকালকে বলেন, আমি ‘তিলোত্তমা নগরী’ গড়তে চাই। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক গতকাল বুধবার খুলনা প্রেস ক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তিনি খুলনাকে ‘বাসযোগ্য নগরী’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
এদিকে ২৯টি ওয়ার্ডের ১৩৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের ৩৯ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, নির্বাচন এলে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসে নগরবাসী। নির্বাচন হয়ে গেলে দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে যায়। প্রতিশ্রুতির অর্ধেক বাস্তবায়ন হলেও নগরীর চেহারা পাল্টে যেত। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামানও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে প্রার্থীর ভাবা উচিত আদৌ তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা।
মন্তব্য করুন