আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৮টি অস্থায়ী পশুহাটের ইজারা লইয়া যেই চিত্র বৃহস্পতিবারের সমকালে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা নিমজ্জিত হিমশৈলের দৃশ্যমান চূড়ামাত্র। প্রায় প্রতি বৎসরই এই সকল হাট লইয়া যেই প্রকার কারসাজি, অনিয়ম ও বল প্রয়োগ চলিয়া থাকে, উহার সামান্যই জনপরিসর বা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়। জানা যাইতেছে, প্রতি বৎসরের ন্যায় এইবারও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কম মূল্যে হাটগুলি ইজারা লইয়া গিয়াছিলেন। সমকালে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনের পর দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হইয়াছিল। উহাতে পাঁচ কোটি টাকা বেশি দর বাড়িয়াছে। অবশ্য সিন্ডিকেট যে বহাল তবিয়তে– পূর্বের ইজারাদারই দাম বাড়াইয়া হাটগুলো লইয়া যাইবার মধ্য দিয়া প্রমাণ হয়।এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না যে, প্রকৃত অর্থেই উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান সম্ভব হইলে রাজস্ব আরও বেশি আদায় হইত।

আমরা মনে করি, দরপত্র ও ইজারার বাহিরে অন্যান্য অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিও দৃষ্টিপাত প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে প্রথমেই আসিবে অননুমোদিত ‘হাট’ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি। প্রতি বৎসর আমরা প্রত্যক্ষ করি, ঈদুল আজহার পূর্বে কীভাবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই রাজধানীর খেলার মাঠ, স্বল্পব্যস্ত সড়ক কিংবা ফাঁকা স্থানসমূহ ‘গরুর হাট’-এর রূপ পরিগ্রহ করে। এমনকি পূর্ব দিবস হইতে ঈদুল আজহার প্রভাতবেলায়ও অলি-গলিতে চলিতে থাকে কোরবানির পশুর ক্রয়-বিক্রয়। ইজারাকৃত হাটসমূহের অনুরূপ এই সকল ক্রয়-বিক্রয়স্থলও রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিয়ন্ত্রণ করিয়া থাকে। তাহাদের সহিত স্থানীয় প্রশাসন, বিশেষত থানা ও ফাঁড়ির যোগসাজশও যে থাকে, উহা বোধে লইতে বিশেষজ্ঞ হইবার আবশ্যকতা নাই। আমরা দেখিতে চাহিব, এই বৎসর উহার পুনরাবৃত্তি হইবে না।

হাটকে কেন্দ্র করিয়া দুর্ঘটনা মোকাবিলার প্রস্তুতিও আগাম লইতে হইবে। আমাদের স্মরণে রহিয়াছে, ২০১৭ সালের জুন মাসে রাজধানীর গাবতলী পশুহাটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে খুঁটিতে বাঁধা ১৯টি অবলা পশু জীবন্ত দগ্ধ হইয়াছিল। অন্যত্র হয়তো সম্ভবপর নহে; গাবতলীর ন্যায় স্থায়ী পশুর হাটে স্থায়ী ও নিরাপদ স্থাপনার দাবিটি তাই পুনর্বার তুলিয়া রাখিলাম।

বৈধ কিংবা অবৈধ হাটসমূহে যেইভাবে কোরবানির পশু টানিয়া আনিবার প্রতিযোগিতা চলিয়া থাকে, উহাও অব্যবস্থাপনা ও বল প্রয়োগের আদর্শ (!) উদাহরণ হইতে পারে। এই জবরদস্তির ক্ষেত্রে ঢাকার বাহির হইতে আসা ব্যাপারীরা অনেক সময় অসহায় হইয়া পড়েন। গরু-মহিষভর্তি ট্রাক নিজেদের হাটে প্রবেশ করাইতে ব্যাপারীদের মারধর করিবার নজিরও বিরল নহে। কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করিয়া রাজধানীজুড়িয়া এইরূপ নৈরাজ্য আর চলিতে দেওয়া যায় না। স্মরণে রাখিতে হইবে, বিষয়টি সার্বিক আইন-শৃঙ্খলারও প্রশ্ন। কোরবানির হাট আর যাহাই হউক, মগের মুল্লুক হইতে পারে না।