- বাংলাদেশ
- চবিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেই যৌন নিপীড়করা
চবিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেই যৌন নিপীড়করা
-samakal-6483035ea9c42.jpg)
বছরখানেক আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মীর হাতে এক ছাত্রীর যৌন নিপীড়নের ঘটনা সাড়া ফেলেছিল দেশজুড়ে। ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও মারধরের মতো নৃশংস কাজ ক্ষোভের জন্ম দেয় ক্যাম্পাসের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মনে। তুমুল আন্দোলনের চাপে পাঁচ দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত সেই পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু এক বছর না যেতেই জামিন পেয়ে ক্যাম্পাসে আবারও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাঁরা। আড্ডা দিচ্ছেন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চায়ের দোকানে। মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ান ক্যাম্পাসজুড়ে। ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্র স্টেশনে চালাচ্ছেন একটি জুসবারও। তাঁদের মতো গত সাত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিষ্কার হওয়া ২০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর অধিকাংশই ফিরে এসেছেন পুরোনো রূপে। থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে।
গত বছরের ১৭ জুলাই ছাত্রী যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত সেই পাঁচজন হলেন– ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আজিম হোসাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের নুরুল আবছার বাবু, হাটহাজারী কলেজের ছাত্র নুর হোসেন শাওন ও মাসুদ রানা এবং সাইফুল। চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের গ্রুপ সিএফসির অনুসারী ছিলেন তাঁরা। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচজনই ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও বিবস্ত্র করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় মামলা করা হয়। কয়েকবার তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হলেও শেষ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন তাঁরা। ছাড়া পেয়েই ফিরে এসেছেন ক্যাম্পাসে। একাডেমিক সিদ্ধান্তে আজীবন বহিষ্কার হওয়ায় ক্লাসে ফেরার অনুমতি নেই। ক্যাম্পাসে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন উপাচার্য। তবে ফিরে এসে আগের মতোই বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ও আড্ডা দিচ্ছেন ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও জামিন পেয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন এলাকায় চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দেখা গেছে নুরুল আবছার বাবুকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে আজিম হোসাইনকেও। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বাকি তিনজনও আসেন ক্যাম্পাসে।
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন এলাকায় চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দেখা গেছে নুরুল আবছার বাবুকে। গত ১৫ দিন ধরে ক্যাম্পাসের রেলস্টেশনে একটি জুসবার চালাচ্ছেন সেই পাঁচজন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় সেই জুসবারে দেখা গেছে নুরুল আবছার ও সাইফুলকে। প্রতিবেদকের পরিচয় গোপন রেখে সেই জুসবারে গেলে নুরুল আবছার জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি এই জুসবার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে আজিম হোসাইনকেও। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বাকি পাঁচজনই আছেন ক্যাম্পাসে।
ক্যাম্পাসজুড়ে তাঁদের বিচরণে আতঙ্কবোধ করছেন ঘটনার শিকার সেই ছাত্রী। তিনি জানান, ক্যাম্পাসে বের হতে একটা ভয় লাগে এখন। ওরা আমার সামনে ঘুরে বেড়ায়। কখনও আমাকে ইঙ্গিত করে কথা বলে। অন্য মানুষকে চিনিয়ে দিচ্ছে– আমি সেই মেয়ে। আবার সেই ট্রমার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমরা তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে তাদের বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা করেছিলাম। তবে এখন তাদের ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়ে অবগত নই। আবার ব্যবস্থা নেব।
হাটহাজারী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, আমরা তখন এ ঘটনায় সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিলাম। আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তাঁরা। এর পরও কোনো অপরাধ করে থাকলে সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এই ঘটনার আন্দোলনের সময় ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় চার ছাত্রলীগ কর্মীকেও বহিষ্কার করা হয়। তাঁরা হলেন– দর্শন বিভাগের রাকিব হাসান রাজু ও মো. ইমন আহম্মেদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের জান্নাতুল ইসলাম রুবেল এবং আরবি বিভাগের জুনাইদ আহমেদ। এই চার কর্মীকে বহিষ্কারের পরও আড্ডা দিতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে। থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল শাহ আমানতে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংঘর্ষ, হেনস্তা ও মারামারির ঘটনায় ১৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এই ১৮ শিক্ষার্থীর ১৭ জনই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। এই ১৭ জনের ১৪ জনই অবস্থান করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে। তিনজন কর্মী আবার অংশগ্রহণ করেছেন বিভাগের বর্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষায়ও। অংশ নেন বিভাগের সেমিনার ও অনুষ্ঠানেও। কয়েকজন কর্মী আবার সক্রিয় আছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও।
জানতে চাইলে চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসনে টিপু বলেন, কর্মসূচিতে কারা যোগদান করে, সেটা খেয়াল করার সুযোগ কম থাকে। তবে এ বিষয়ে আমরা এখন থেকে হুঁশিয়ারি দেব।
মন্তব্য করুন