- বাংলাদেশ
- লোডশেডিং কমেছে, স্বস্তি বৃষ্টিতে
লোডশেডিং কমেছে, স্বস্তি বৃষ্টিতে

প্রতীকী ছবি
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং কমেছে। স্বস্তি ফিরেছে সার্বিক জনজীবনে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়। এতে কয়েক দিন ধরে চলা নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ কমেছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসে। জাতীয় গ্রিডে নতুন বিদ্যুৎও যুক্ত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেলের কিছু সময় দেশ লোডশেডিংমুক্ত ছিল বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও লোডশেডিং কমার বিষয়ে অনেকে পোস্ট করেছেন।
আবহাওয়া অফিস বলেছে, রোববার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। ফলে কয়েক দিন বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে সাময়িক পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারতের আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ বেড়েছে। এদিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু থাকা চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কেন্দ্র থেকে উৎপাদন কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে।
তীব্র তাপদাহ এবং জ্বালানি সংকটে সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের মুখোমুখি হয় দেশ। ডলার সংকটে গ্যাস, কয়লা এবং জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সক্ষমতা থাকার পরও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি। বন্ধ রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। গরমের কারণে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট পেরিয়ে যায়। বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছিল গড়ে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। গভীর রাতেও লোডশেডিং হচ্ছিল। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার চালু কেন্দ্রগুলো থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়।
এর মাঝে বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। রংপুর আর খুলনা বিভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল কম। তবে শুক্রবার দেশের অধিকাংশ স্থানেই বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। কয়েক দিন ধরে যা ছিল ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের তাপমাত্রাও বৃষ্টির কারণে অন্তত ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেছে। রোববার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। এরপর আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। ১৪-১৫ জুনের দিকে আবার বৃষ্টি হতে পারে। তাপমাত্রা কমায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি এবং ডেসকোর এলাকায় কোনো লোডশেডিং হয়নি। দেশের অন্য এলাকাতেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুসারে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় দেশে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৬৬ মেগাওয়াট, চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার একই সময়ে সারাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৪৩ মেগাওয়াট, চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর গতকাল বিকেল ৫টায় দেশে কোনো লোডশেডিং হয়নি। চাহিদা ছিল ৯ হাজার ৯০৩ মেগাওয়াট। সন্ধ্যা ৬টায় ৪৭০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
আদানির সরবরাহ বেড়েছে, বন্ধ এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র
ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিত আদানি গ্রুপের চালু প্রথম ইউনিট থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। এখন দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এতে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটটি পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ এসেছিল ১০৮৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে ৪৪৩ মেগাওয়াট আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে এসেছে ৬৪০ মেগাওয়াট। শুক্রবার সকাল ১০টায় আদানি থেকে মোট আমদানি হয়েছে ১০৬৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট পূর্ণ ক্ষমতায় চলে উৎপাদন করেছে ৭৫৯ মেগাওয়াট আর প্রথম ইউনিট দিয়েছে ৩১০ মেগাওয়াট।
কয়লা সংকটে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনের চার দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রটি ৩০০ থেকে ৩৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছিল। গত ৪ মে থেকে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করে কেন্দ্রটি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লোডশেডিংয়ের কারণে সরকারের অনুরোধে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে তারা। মজুত কয়লা দিয়েই তারা উৎপাদন চালিয়েছে। নতুন করে কয়লার আমদানি করা হচ্ছে। আগামী ২০ জুন তা দেশে আসার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন