- বাংলাদেশ
- ফেরত গেছে উন্নয়ন খাতের ১৭০ কোটি টাকা
আইন ও বিচার বিভাগের বাজেট
ফেরত গেছে উন্নয়ন খাতের ১৭০ কোটি টাকা

ফাইল ছবি
দেশের ৬৪ জেলার প্রায় সব আদালতেই এজলাস, জনবল সংকটসহ নানা সমস্যা আছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারেও পিছিয়ে এসব আদালত। অথচ চলতি অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ করা উন্নয়ন খাতের ১৭০ কোটি টাকা ফেরত গেছে। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ঘোষিত বাজেটের টাকা ব্যয় করতে না পারায় এমনটি ঘটেছে। এটি বরাদ্দ করা মোট টাকার প্রায় ২০ শতাংশ।
আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবহেলা ও সমন্বয়হীনতার কারণে চলতি অর্থবছরে ১৭০ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেছে। অথচ বাজেট বরাদ্দের পরপরই ব্যবস্থা নেওয়া হলে এমনটা হতো না। টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখে গেছে।
বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নজরে নেওয়া হলে তিনি সমকালকে বলেন, ‘কিছু টাকা ফেরত গেছে জেনেছি, কিন্তু সেটা ১৭০ কোটি হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখছি। এমনটা হলে অবশ্যই ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। আমরা তো চাহিদা থেকেও কম টাকা বরাদ্দ পাচ্ছি।’ পরে মন্ত্রী জানান, জমি অধিগ্রহণ, গাড়ি ও কম্পিউটার কেনা, রক্ষণাবেক্ষণসহ কিছু বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ দ্রুত ছাড় করার বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় এবার অর্থবছরের শুরুতেই জেলাওয়ারী আদালতগুলোতে বাজেট বরাদ্দ বিতরণ করা হবে। জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ার সমকালকে বলেন, আগামী অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দের পর দ্রুত টাকা ছাড় করার নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জেলাওয়ারী আদালতগুলোতে দ্রুত বাজেট বরাদ্দ করা হবে।
গত ১ জুন সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। এতে এবার আইন ও বিচার বিভাগের জন্য ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘোষিত বাজেট থেকে ১৭০ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেছে। পরে ২০২২-২০২২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
এদিকে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলা জজ সমকালকে জানান, ২০১৯-২০২০ সালে প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত জেলা জজদের যে গাড়ি দেওয়া হয়েছিল, তা টাকার অভাবে যথাসময়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে ইতোমধ্যে অধিকাংশ গাড়ির আয়ুষ্কাল কমে গেছে। বিষয়টি নজরে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে আইন মন্ত্রণালয়। এমন আরও অনেক ঘটনা রয়েছে। তারা জেলাওয়ারী বাজেট বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
আইন ও বিচার বিভাগের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে গত ২৩ বছরের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৯৯-২০০০ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনেই বিচার বিভাগের ব্যয় নির্বাহ হতো। তখন বাজেটে সামগ্রিক বরাদ্দ ছিল ১২৭ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৬ কোটি টাকা। ২০০১-২০০২ সালে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের (বিচার বিভাগ) জন্য পৃথক বরাদ্দের ব্যবস্থা চালু করে সরকার। ওই অর্থবছরে আইন বিভাগের জন্য ১৪৮ কোটি এবং সুপ্রিম কোর্টের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১২ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দ শূন্য দশমিক ৩৭৮ শতাংশ। তবে এতে বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। বিচার বিভাগের উন্নয়নে প্রথম বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে বাজেটে (সংশোধিত) মোট বরাদ্দ ছিল ৭৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ৬৬৪ কোটি এবং সুপ্রিম কোর্টের জন্য ৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও উন্নয়ন খাতে ছিল ১২ কোটি টাকা। বরাদ্দ মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। এবারের বাজেটে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জন্য ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, ‘বহু বছর ধরে বলে আসছি, ১৭ কোটি মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার মহাসড়ক বানাতে যে বরাদ্দ থাকে, তার প্রায় সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় আইন ও বিচার বিভাগে, যা অত্যন্ত অপ্রতুল। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, বছরের পর আদালতের বারান্দায় বিচারপ্রার্থীর ছোটাছুটি ও মামলাজটের প্রধান কারণ হলো বিচারকের স্বল্পতা, বিচারসংক্রান্ত অবকাঠামোর দুর্বলতা, দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাব। এসব দুর্বলতার জন্য দায়ী বাজেটের অপ্রতুলতা।’
১৭০ কোটি টাকা ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে শাহ্দীন মালিক বলেন, ‘এ বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ও দুর্বলতাকে ইঙ্গিত করে।’
মন্তব্য করুন