- বাংলাদেশ
- আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের ফাঁদে পা দিতে চায় না প্রশাসন
এডিসি হারুন ইস্যু
আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের ফাঁদে পা দিতে চায় না প্রশাসন
দোষী ব্যক্তির শাস্তির প্রত্যাশা

আজিজুল হক, হারুন-অর-রশীদ
পুলিশের ঢাকা মহানগরের এডিসি এবং রাষ্ট্রপতির এপিএসের বিরোধকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের ঘটনাকে নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে চান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ ঘটনায় জড়িতরা যে ধরনের অপরাধ করেছেন, তাদের তেমন শাস্তির আওতায় আনা হোক। দোষী ব্যক্তি পুলিশ, নাকি প্রশাসন ক্যাডারের, সেটা বড় বিষয় নয়।
গতকাল সচিবালয়ে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাবের কথা জানা গেছে। তারা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা বলেই তাঁর দোষ ঢেকে রাখতে হবে– এমন কথা নেই। এটা সরকারি কোনো বিষয় নয় যে, সরকারের ভাবমূর্তি জড়িত। কর্মকর্তারা তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। তাই তাদের নিজেদেরই এর দায় নিতে হবে।
সমকাল যাদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দুই নেতাও রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন বলেন, আজিজকে সবাই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে বলছেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তিনি প্রশাসন ক্যাডারের নন। তিনি মূলত ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা। ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কারণে তিনি এখন প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
গত শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের এডিসি (অতিরিক্ত উপকমিশনার) সানজিদা আফরিনকে কেন্দ্র করে আরেক এডিসি হারুন-অর-রশীদ ও রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হকের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
প্রশাসন ক্যাডারের অপর এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ঘটনার পর সানজিদাকে দিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলানো হয়েছে। পুলিশের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। এর অন্তর্নিহিত অর্থ দাঁড়ায়– পুলিশ এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কে বেশি দোষী, কে আগে দোষ করেছেন; তা নিয়ে প্রতিযোগিতার মতো মনে হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়ে সাধারণত গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির সময় আরও বেড়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপারেশন) আবু ইউসুফের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মামলা হয়নি
এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকে মেরে দাঁত ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটালেও গত এক সপ্তাহে এ সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়নি। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি রাষ্ট্রপতির এপিএস এবং এডিসি সানজিদার বিরুদ্ধেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব খবর এ পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে, তাতে এ তিন কর্মকর্তা অসদাচরণ এবং ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে প্রতীয়মান। এরই মধ্যে এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮-এর কথা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া সমকালকে বলেন, একজন সরকারি কর্মচারী অন্য কর্মচারীকে আঘাত করলে সেটা অবশ্যই অসদাচরণ। এ ছাড়া কেউ বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও অসদাচরণের সঙ্গে ফৌজদারি অপরাধ। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খান বলেন, গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হলে পারস্পরিক সমঝোতায় মিলে যাওয়ার সুযোগ নেই। এমন ঘটনা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে হবে। কোনো কারণে বাদী মামলা করতে না পারলে রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা করে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। এডিসি হারুনকাণ্ড বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অধস্তন আদালতের সাবেক বিচারক ও বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু সমকালকে বলেন, ক্রিমিনাল অফেন্স অবশ্যই আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। জখমি অভিযোগকারী হিসেবে অভিযোগ জানাতে না পারলে পুলিশ সে বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। পুলিশ সেই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যদি কোনো ব্যক্তি পোস্টঅফিসের মাধ্যমে জানায় বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তাহলে তা দেখেও পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।
আজিজুর রহমান আরও জানান, যদি কোনো কারণে পুলিশ পদক্ষেপ না নেয়, সে ক্ষেত্রে সিআরপিসির ১৯০(১)(গ) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের উদাহরণ আমাদের দেশে খুব বেশি দেখা যায় না।
মন্তব্য করুন