ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘মেরুদণ্ড শক্ত করে না দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। তার সমস্ত কাজের মধ্যে ছিল মেরুদণ্ডের দৃঢ়তা, যা দেখেছেন তা বলেছেন। ছিলেন স্পষ্টভাষী, কারও তোয়াক্কা করেননি। তিনি ছিলেন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। সাংবাদিকতার সঙ্গে সাহিত্যের একটা বিরোধ রয়েছে, সাংবাদিকতা হলো লিটারেচার ইন অ্যা হারি। আর সাহিত্য ধীরস্থির, সুস্থ পরিকল্পনা করে লিখতে হয়। আবুল মনসুর আহমদ দুটিকে একখানে করেছিলেন, সাহিত্য ও সাংবাদিকতার অসাধারণ মিশ্রণ ঘটিয়েছেন, যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’ 

শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান’ অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ‘আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ’। 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আবুল মনসুর আহমেদ বুঝেছেন, এ সমাজ বদলাতে হবে এবং তার জন্য সংস্কৃতির প্রস্তুতি প্রয়োজন। তিনি কৃষ্টির কথা, সংস্কৃতির কথা, পাকবাংলার কালচারের কথা বারবার বলেছেন।’ 

বৈষম্যই দেশে দারিদ্র্যের সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে লেখক-প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সমাজ বদলের জন্য সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দরকার। হাজার বছর ধরে ব্যক্তি মালিকানায় যা চলছে সেটাকে সামাজিক মালিকানায় রূপ দিতে হবে। আর সেটা করা না গেলে কখনও পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ 

নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জয় বাংলা বললে আমরা আওয়ামী লীগ বুঝি, আবার জিন্দাবাদ বললে বিএনপি বা অন্যদের বুঝি। জল বললে হিন্দু আবার পানি বললে মুসলমান বুঝি। এ শব্দগুলো যে আমরা ধরে রেখেছি, এর পেছনে রাজনৈতিক-অর্থনীতির ঐতিহাসিকতা আবুল মনসুরের চেয়ে অধিক কেউ বোঝেননি। দেশভাগের আগে তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক পাকিস্তান হবে কিনা জানি না, তবে একটি সাংস্কৃতিক পাকিস্তান এখানে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে দৈনিক সমকালের পরিকল্পনা সম্পাদক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আবুল মনসুর আহমদকে বাংলাদেশের আদি ইতিহাসের সামাজিক বিপ্লবের প্রতিভূ হিসেবে দেখতে চাই। তিনি একসঙ্গে সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও রাজনীতি করেছেন। নিজেকে বলেছেন, সাধারণ দেশপ্রেমিক আত্মসম্মানী বাঙাল। বলেছেন, আমি মুসলমানের পক্ষে; কারণ তারা নিপীড়িত, ইসলাম নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেইু তার এই অ্যাপ্রোচ ছিল সেক্যুলার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবুল মনসুর আহমদের কৃষক প্রজা পার্টির মাধ্যমে যে সমাজ রূপান্তরের বিপ্লবী ভূমিকা, সাংবাদিকতার ভেতর দিয়ে বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক রাজনীতির সূচনা করা, স্বাধীনতার আগে ও পরে তার দূরদর্শিতাু এসব জানতে আহমদ ছফার বই আমরা যেমন পড়ি, তেমনি তার বইগুলোও পড়া উচিত।’

ইমরান মাহফুজের সঞ্চালনায় সভায় আরও আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী এবং সাংবাদিক ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন। ধন্যবাদ জানান ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। 

প্রতিযোগিতায় ‘শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা’ অংশে বিজয়ী হন জোবায়ের ইবনে কামাল, আবুল হাসনাহ ও ফরিদ উদ্দীন রনি; ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও আবুল মনসুর আহমদ’ অংশে জি মোস্তফা, ফাইজা বিনতে হক ও মেসবাহ উদ্দীন ফাহিম এবং ‘আবুল মনসুরের সমাজ চিন্তা’ অংশে বিজয়ী হন রাবাত রেজা নূর, মাহবুব নাহিদ ও মোহাইম আহমেদ আশিক।