জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এখন সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে বহুমুখী কার্যক্রমে জোর দিয়েছে পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। বিভিন্ন পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কর্মশালা-আলোচনা সভা ছাড়াও ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ নামে একটি কাউন্টার ন্যারেটিভ (পাল্টা ব্যাখ্যা) সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গত অর্থবছরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৯০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে। সেই সঙ্গে উগ্রবাদের কারণ অনুসন্ধান এবং প্রতিকারে দুটি গবেষণা কার্যক্রম চলছে।

জঙ্গি দমনে গঠিত পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এটিইউর ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এই ইউনিটের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। তবে সব প্রস্তুতি শেষে আরও দুই বছর পর তারা অভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে।

এটিইউপ্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিন সমকালকে বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে গ্রেপ্তার অভিযান ও প্রতিরোধ কার্যক্রম– দুটোই চলমান। সহিংস উগ্রবাদ দমন এবং প্রতিরোধে এটিইউর কার্যক্রম এরই মধ্যে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করেছে।

এটিইউ তার লক্ষ্য অর্জনে কতটা অগ্রসর হতে পেরেছে তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন আছে। এ প্রসঙ্গে এটিইউর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, শুধু গ্রেপ্তার বা মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে বিবেচনা করলে ইউনিটটির সামগ্রিক কার্যক্রম স্পষ্ট হবে না। এটিইউ তৈরির মূল উদ্দেশ্য সন্ত্রাসবাদ দমন ও সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধ। জঙ্গিবাদ এমন একটি ক্ষেত্র যে গ্রেপ্তার করেই তা দমন সম্ভব নয়। এ কারণে বিশেষ এ ইউনিট জোর দিয়েছে উগ্রবাদ প্রতিরোধে। এটিইউ এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) যৌথভাবে কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং কার্যক্রমে সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নির্ধারণে কাজ করছে। ছয়টি বিভাগীয় শহরে এটিইউ এ-সংক্রান্ত টেকনিক্যাল নিড অ্যানালাইসিস ও কর্মশালা পরিচালনা করেছে। উগ্রবাদ প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে এটিইউ নিয়মিত গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, আলেম-ওলামা ও তালিবুল ইলমদের (মাদ্রাসা শিক্ষার্থী) সঙ্গে মতবিনিময় ও কর্মশালা পরিচালনা করছে। অনলাইনের মাধ্যমে উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়া এবং এর ফলে পরিবারের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এটিইউ ওভিসি ও টিভিসি নির্মাণ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস ও কারণ; সহিংস উগ্রবাদী কার্যক্রমে ব্যবহৃত অস্ত্র, সম্পদ, সরঞ্জাম ও অর্থায়ন; জঙ্গি হামলার শিকার ও লক্ষ্য; সন্ত্রাস বিরোধী আইন ও বিধি; নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর কার্যক্রম; জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পদ্ধতি; উগ্রবাদ প্রতিরোধে সুশীল সমাজ ও বিট পুলিশের ভূমিকা; সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের পলিসি ও চ্যালেঞ্জসমূহ; সাইবার সন্ত্রাস প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়; সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে ইসলামের অপব্যাখ্যা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে এটিইউ সারাদেশের ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে ৯০০ বিট পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, কার্যক্রম শুরুর পর গত চার বছরে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ২০৩ সদস্যসহ মোট ৩১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এটিইউ।

এটিইউ সূত্র জানায়, চার বছরে গ্রেপ্তারকৃতদের বড় অংশই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এর মধ্যে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের ২৪ জন, নব্য জেএমবির আট, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৫৮, আল্লাহর দলের ৩৪, হিযবুত তাহরীরের ৩২, আনসার আল ইসলামের ৪২ ও উগ্রবাদ প্রচারকারী তিনজন রয়েছে। এটিইউর সহকারী পুলিশ সুপার ওয়াহিদা পারভীন বলেন, ৬৪ জেলায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নামে কমিটি করা হয়েছে। এটিইউর পক্ষ থেকে নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। চারটি বিভাগীয় কার্যালয় থেকেও কার্যক্রম চলছে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এটিইউর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন হলেও তারা মূলত পরের বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। আর ২০১৯ সালে ‘অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট বিধিমালা-২০১৯’ প্রণয়নের পর শুরু হয় তাদের অভিযানিক কার্যক্রম। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে এ ইউনিটের গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫৮১টি পদ সৃষ্টি করা হয়।