আমদানির খবরে পাইকারি বাজারে সামান্য কমেছে ডিমের দাম। আলু, পেঁয়াজের দামও ধীরে ধীরে কিছুটা কমছে। তবে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে এখনও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্য তিনটি। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাইকারি বাজারে দাম না কমিয়ে খুচরা বাজারে সরকার অভিযান চালালে তাতে কোনো লাভ হবে না। এতে ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন রাঘববোয়ালরা।

অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৪ থেকে ৩৫ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা দর বেঁধে দেওয়া হয়, যা ওই দিন থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে দর নির্ধারণের ছয় দিনেও বাজারে ওই দামে বিক্রি হতে দেখা যায়নি। যদিও এ দর বাস্তবায়নে প্রতিদিনই বাজারে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকালও রাজধানীসহ সারাদেশে ভোক্তা অধিদপ্তর নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান চালিয়ে ১০৫ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

বাজারের এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার চার প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর পরও কার্যত খুব বেশি প্রভাব পড়েনি ডিমের বাজারে। শুধু ছোট আকারের ডিমের দাম দু-এক জায়গায় ডজনে চার থেকে পাঁচ টাকা কমতে দেখা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার ও কারওয়ান বাজারে প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। যদিও পাড়া-মহল্লায় এখনও আগের মতোই ১৫০ টাকার আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে।

তবে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি শ ডিমে দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, দেশে প্রতিদিন ডিমের দরকার ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি পিস। আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি পিসের। সব ডিম এলেও তেমন কিছুই হবে না। হয়তো সাময়িক কিছুটা কমবে।
তিনি বলেন, তেজগাঁওয়ে পাইকারি পর্যায়ে ডিমের বেচাকেনা হয় রাতে। সোমবার রাতে ডিমের শ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৩০ টাকা দরে। অর্থাৎ, প্রতি পিসের দাম পড়ছে সাড়ে ১১ টাকা। এখনই বাজারে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এলসি খুলে ডিম আমদানির পর তা ভোক্তা পর্যায়ে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজারগুলোতে আলুর কেজি পাঁচ টাকার মতো কমেছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। তবে এলাকাভিত্তিক ছোট বাজার ও মহল্লায় এখনও আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আলুর দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা।

দেশি পেঁয়াজের বাজারে সামান্য প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। এ ধরনের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়, যা সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে ১১ থেকে ২০ টাকা বেশি। অবশ্য দু-তিন দিন আগে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আমদানি করা পেঁয়াজের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের মতোই তা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের আলু ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, আড়তের ব্যবসায়ীরা রাতে পাইকারি দরে আলু বিক্রি করে বাসায় চলে যান। আর সকালে ভোক্তা অধিদপ্তর এসে জরিমানা করে খুচরা ব্যবসায়ীদের। এতে ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ সময় তিনি আলুর হিমাগার এবং পেঁয়াজের বড় বড় আড়তে অভিযান পরিচালনা করার দাবি জানান।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে প্রতি মাসে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয়। গত বৃহস্পতিবার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের সঙ্গে ভোজ্যতেলের দরও কমানো হয়। এ দফায় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দর ১৬৯ এবং পাঁচ লিটারের বোতলে ২৫ টাকা কমিয়ে ৮২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি পাম অয়েল লিটারে চার টাকা কমিয়ে ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাজারে বর্তমানে এ দরেই পাওয়া যাচ্ছে ভোজ্যতেল। তবে চিনির দর কমেনি। গত ১৩ আগস্ট পাঁচ টাকা কমিয়ে প্রতি কেজি খোলা চিনির দর ১৩০ এবং প্যাকেট চিনির দর ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। তবে বাজারে এ দরে চিনি মিলছে না। খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা চিনি ১৩৫ এবং প্যাকেট চিনি ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

ডিম আমদানির অনুমতি বাতিলের আহ্বান

ডিম আমদানির অনুমতি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বিপিআইএ)। তারা বলছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে ডিম আমদানি হলে এ খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়ে এমন সিদ্ধান্তের ফলে লাখ লাখ খামারি সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন।    
গতকাল বিপিআইএর ৫ম কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি শাহ হাবিবুল হক এতে সভাপতিত্ব করেন।

সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের ডিম আমদানির সিদ্ধান্তে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে। যার প্রভাবে দেশে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হবে। ডিম আমদানি হলে দেশে বার্ডফ্লুসহ অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।

বিষয় : সরকার নির্ধারিত দর ৬ দিনেও অকার্যকর

মন্তব্য করুন