ঢাকা শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩

বাগেরহাটে দুদকের গণশুনানি

২০ দপ্তরের বিরুদ্ধে ৭১ অভিযোগ

২০ দপ্তরের বিরুদ্ধে ৭১ অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

বাগেরহাটে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দিনব্যাপী শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সরকারি ২০টি দপ্তরের বিরুদ্ধে ৭১টি অভিযোগ করা হয়।

শুনানিতে অংশ নেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত আউট অব স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী এনজিও ‘সুখী মানুষের’ বিরুদ্ধে উপকরণ সহায়তা প্রদান না করা, কর্মীদের বেতন না দেওয়া এবং জামানতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন তিনি। জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাসকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

শরণখোলা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন অভিযোগ করেন, প্রেস ক্লাবের অনুকূলে ২ লাখ টাকার অনুদান দিতে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা। অভিযোগের বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী ঝুমুর বালা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না হওয়ার আশ্বাস দেন।

বিআরটিএতে চার বছর ঘুরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাননি সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘জেলার বাইরে চাকরি করি। বিআরটিএতে চার বছর ঘুরে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইনি। অস্থায়ী রোড পারমিট নিয়ে আমায় চলতে হয়।’ অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিএ বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক লায়লাতুল মাওয়া বলেন, সার্ভার পরিবর্তনের কারণে কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে সমস্যা হচ্ছে। অভিযোগকারীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

হোল্ডিংয়ে নাম পরিবর্তনের জন্য ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে বলে বাগেরহাট পৌরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এক নারী। টাকা না দেওয়ায় তাঁর হোল্ডিং পরিবর্তন হচ্ছে না। এ অভিযোগের জবাব দেন পৌরসভার প্রধান নির্বাহী ও বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমাদের পৌরসভা মিউটেশন করা লাগে। এ জন্য পৌরসভা রেজ্যুলেশন করে ফি নির্ধারণ করেছে, এটা ৫ হাজার টাকা। যেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তিনি সেলিম সাহেব, এখানে আছেন। তবে তাঁর দাবি টাকা চাননি তিনি।

এ ছাড়া শুনানিতে বাগেরহাট সদর উপজেলা এসিল্যান্ড, সাব-রেজিস্ট্রার, ভূমি অধিগ্রহণে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অফিস, বাগেরহাট জেলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ ২০টি দপ্তরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দেন সেবাপ্রার্থীরা। এর মধ্যে অধিকাংশ অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা হয়। কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন দুদক সচিব। জনসাধারণের আনা অভিযোগ সমাধান হলো কিনা, তা সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে দুদকে জানাতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেনের সঞ্চালনায় শুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। উপস্থিত ছিলেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো. মঞ্জুর মোরশেদ, বাগেরহাটের উপপরিচালক মো. শাহরিয়ার জামিল, পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) বাগেরহাটের সভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি। দুর্নীতি প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষা প্রত্যেক নাগরিককে মনেপ্রাণে ধারণ করতে হবে। শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি কমানো সম্ভব নয়। কমিশনের কাজ হচ্ছে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ করা।

আরও পড়ুন