রোডমার্চে বিএনপি নেতারা
হরতাল অবরোধ কর্মসূচি আসছে, প্রস্তুতি নিন

ফাইল ছবি
সিলেট ব্যুরো এবং কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২৩:৫০
রোডমার্চে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হরতাল-অবরোধসহ সব ধরনের কর্মসূচি পালন করতে নেতাকর্মীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তারা বলেছেন, বিএনপি হরতাল কর্মসূচি দেয়নি বলে সামনেও আর দেবে না– এমন প্রতিজ্ঞা করেনি। অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য হরতাল-অবরোধ যা যা করা দরকার গণতান্ত্রিক পন্থায় সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেজন্য সবাইকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরবেন; নয়তো লড়বেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে রোডমার্চ-পূর্ব সমাবেশে দলের সিনিয়র নেতারা এসব কথা বলেন। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে এদিন ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটারের বেশি পথে রোডমার্চ করেছে বিএনপি।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে এ রোডমার্চ আয়োজন করছে দলটি।
একই দাবিতে আজ রাজধানীতে পৃথক দুটি সমাবেশ করবে দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটসংলগ্ন ময়দানে এবং ঢাকা দক্ষিণের উদ্যোগে যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কে বিকেল ৩টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া একই দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বাদ জুমা সারাদেশে জেলা, মহানগর, থানা-উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দোয়া-মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন তিন বিভাগের ওপর দিয়ে অনুষ্ঠিত রোডমার্চ উপলক্ষে নেতাকর্মীরা বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ছাড়াও কয়েক হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে যোগ দেন। মাথায় ব্যান্ড পরে, রংবেরঙের গেঞ্জি গায়ে নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পথে পথে বিভিন্ন এলাকার দায়িত্বশীল নেতারা ছাড়াও বিগত নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থী, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী, কেন্দ্রীয় নেতারা শোডাউন করেন। রোডমার্চ ভৈরব ব্রিজ ও আশুগঞ্জ পার হয়ে সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মাঝপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড মোড়, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ মোড়, মৌলভীবাজারের শেরপুরে পথসভায় বক্তব্য দেন নেতারা।
রোডমার্চের শুরুতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না। তিনি বলেন, বিএনপি আগুন দিয়ে মানুষ মারে না, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায় না। পথচারীদের বস্ত্র হরণ করে না। এখনও হরতাল দেয়নি।
তিনি নেতাকর্মীর কাছে জানতে চান, দাবি আদায়ে হরতাল দেওয়া দরকার আছে? অবরোধ দেওয়ার দরকার আছে? আপনারা পালন করবেন? তিন প্রশ্নের উত্তরে নেতাকর্মীরা বলেন ‘হ্যাঁ’। এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, আপনাদের রায় পেলাম।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকারকে সরকার বলা যায় না। এটা একটি রেজিম। এদের প্রতি শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়; বিদেশিদেরও আস্থা নেই। এই রেজিমকে সরাতে মুক্তিযুদ্ধের পরে সবচেয়ে বড় সংগ্রাম করতে হবে এবং বিজয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। নতুন প্রধান বিচারপতিকে ছাত্রলীগের নেতারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আর তিনিও তা গ্রহণ করেছেন। এ থেকেই সবাইকে পরিস্থিতি বুঝে নিতে হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেশ আলী মামুন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিলেটের উদ্দেশে বিপুলসংখ্যক গাড়িবহর নিয়ে রোডমার্চ শুরু করে। পথের সব জেলার থানা-উপজেলার নেতাকর্মীরাও এতে যোগ দেন। একসময়ে রোডমার্চের গাড়িবহর কয়েক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।
রোডমার্চ কিশোরগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছানোর পর জেলার আশুগঞ্জ, সরাইল বিশ্বরোডের মোড় ও কুট্টাপাড়া এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী এতে যোগদান করেন। এখানের পথসভাতেও নেতারা বক্তব্য দেন।
দুপুরে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের নর্থইস্ট আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে পথসভার আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এ কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকেন। বিভিন্ন যান ও মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল আর স্লোগানের মাধ্যমে রোডমার্চকে স্বাগত জানান তারা।
তুমুল ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিকেল সাড়ে ৫টায় রোডমার্চ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে পৌঁছানোর পর সেখানে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে স্থানীয় নেতাকর্মীরা চার ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে রোডমার্চের জন্য ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অপেক্ষা করেন। শেরপুরের সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফ্যাসিবাদের দিন শেষ খালেদার জিয়ার বাংলাদেশ। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিবেক ও গণতান্ত্রিক শক্তি এক দফা দাবির আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
রোডমার্চটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিলেট এসে পৌঁছায়। রাতে সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু ছাড়াও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কলিম উদ্দিন মিলন, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ, নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সিলেটে তুমুল বৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই জনসভাস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হন নেতাকর্মীরা।