ঢাকা সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

‘সংকটে তরুণদের মনোবল ঠিক রাখতে হবে’

‘সংকটে তরুণদের মনোবল ঠিক রাখতে হবে’

ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:৩৬ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ০৯:৫৪

অভিভাবকের অধিক প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে টানাপোড়েন, শিক্ষাজীবনে অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা দানা বাঁধছে। প্রয়োজনীয় শুশ্রুষা ও মনোযোগের অভাবে এই হতাশা তাদের পরিচালিত করছে আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পথে। সে বিষয়ে সচেতন করতে প্রেরক ফাউন্ডেশন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করে আত্মহত্যা প্রতিরোধকমূলক আয়োজন ‘আলোর মুখোমুখি’। প্রোগ্রামে বক্তারা আত্মহত্যার ভয়াবহতা ও প্রতিরোধ করণীয় নিয়ে কথা বলেন।

শনিবার বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন; প্রক্টর প্রফেসর ড. মীর মো. মোজাম্মেল হক; কবি ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন, দ্য ডেইলি স্টারের বাংলা অনলাইন সংস্করণের সাহিত্য সম্পাদক, কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ; লেখক ও গবেষক ফয়সাল আহমেদ, প্রেরক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শফিক আহমেদ ভুইয়া এবং প্যারেন্টস এজিং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের। 

প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, নিজেকে কেন হত্যা করব। মানুষের কষ্ট দেওয়ার জন্য নিজেকে শেষ করে দেওয়া উচিত নয়। নিজেকে ভালোবাসতে হবে। প্রেরক ফাউন্ডেশন খুব ভালো কাজ করছে, তাদের কাজ প্রশংসনীয়।’ তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যার চিত্র তুলে ধরেন।

ড. কাজল রশীদ শাহীন বলেন, ‘একটি সমাজ নানাভাবে সংকট মোকাবিলা করে। সেই সমাজের প্রভাব পড়ে তরুণ প্রজন্মের উপর। তার থেকে প্রজন্মের মুক্তি দরকার। মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের জীবনেও অনেক ব্যথা দুঃখ ছিল কিন্তু তারা জীবনের নিয়ম থেকে বিদায় নেন নাই। তারা কাজ করে গেছেন সাহিত্য সংস্কৃতির সমাজের অবহেলা পেয়েও এগিয়ে কালজয়ী হয়েছেন। আমরা তাদের জীবনের গল্প খেয়াল করলে প্রেরণা পাব।’

ইমরান মাহফুজ বলেন, ‘আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তার জন্য তারুণ্যের প্রতি সমাজের আন্তরিকতা প্রয়োজন। সুতরাং আত্মহত্যা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের করা উচিৎ। তাহলে তারা এগিয়ে যাবার প্রেরণা খুঁজে পাবে।’

ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘জীবনের আনন্দ ছড়িয়ে দিয়ে বাঁচার প্রেরণা দিতে হবে আমাদের।’ প্রেরকের অভিনব কাজের প্রসংশা করেন তিনি।

আত্মহত্যাকারীদের একটি বড় অংশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মান-অভিমানের কারণে। এর পরিমাণ ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব নিরসনের উপায় নিয়ে কথা বলেন প্যারেন্টস এজিং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের।

প্রেরক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শফিক আহমেদ ভুইয়া বলেন, “তারুণ্য হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার। তরুণদের চিন্তা-চেতনা, মন-মগজে পুরাতনকে সংস্কার করে নতুন কিছু করার ভাবনা তৈরি করতে হবে, আর এ ক্ষেত্রে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস সবচেয়ে কার্যকরী। তাই তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে করতে হবে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। সেই ভাবনা নিয়েই- একঝাঁক উদ্যমী তরুণ ও সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষের মানসিক উন্নয়নকে ঘিরে কাজ করে যাচ্ছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রেরক ফাউন্ডেশন’।” 

আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রধান বাধা হলো সামাজিক সচেতনতার অভাব ও আত্মহত্যা সচেতনতায় উন্মুক্ত আলোচনার অভাব এবং এ বিষয়ে সঠিক তথ্য ও পর্যালোচনার অভাব। আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। ফলে মারাত্মকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অধিকতর সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে প্রেরক ফাউন্ডেশন। এ আয়োজনের মিডিয়া সহযোগী ছিল ইত্তেফাক ও সময় জার্নাল।

আরও পড়ুন