ঢাকা সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

বিশিষ্টজনের অভিমত

জনগণকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিন

জনগণকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিন

সুলতানা কামাল- ফাইল ছবি

সুলতানা কামাল

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:৩৬ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ | ০৫:৩৫

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শনিবার একই সময়ে কাছাকাছি দূরত্বে ‘মহাসমাবেশ’ ডেকেছে। নির্বাচন সন্নিকটে। রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশ করবে, নির্বাচনে জয়ী হলে কী উপায়ে তারা ‘মানুষের সেবা’ করবে, সে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবে– এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুটি দল একই দিনে সমাবেশ ডাকায় জনমনে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এত উদ্বেগ ও শঙ্কা কেন? কারণ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ পরস্পরের প্রতি মারমুখী। যদিও তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কোনো সহিংসতা নাও ঘটতে পারে। তবে উভয়পক্ষের সাজসাজ রব দেখে জনগণ যে তাদের কথায় ভরসা রাখতে পারছে না, তা স্পষ্ট।

নিকট অতীতে দল দুটি যে ভাষা, যে ভঙ্গিতে পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের মনে ভয় সঞ্চার হওয়াই স্বাভাবিক। জনগণ দল দুটির অধীনে যেমন শাসনের অভিজ্ঞতা; তেমনি বিরোধী দল হিসেবেও ভূমিকা দেখেছে। রাজনৈতিক স্বার্থ যখন সংকীর্ণ ক্ষমতার পর্যায়ে নেমে যায়, তখন রাজনৈতিক দলগুলো কতটা সহিংস হতে পারে, তা জনগণ ভুলে যায়নি। এ ক্ষেত্রে কার দোষ বেশি, কার কম– সেটি ভিন্ন তর্ক। তবে এ মুহূর্তে দুই দলের সহিংস কথাবার্তা, পরস্পরকে দেখে নেওয়ার হুমকি জনমনে অনিরাপত্তাবোধ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই ভীতি দূর করার দায় কি গণতান্ত্রিক শক্তি দাবিদার দলগুলোর নেই? তাদের কি উচিত নয় জনগণের এ অনুভূতিকে আমলে নিয়ে নিজেদের আচরণ ও কথাবার্তা সংযত করা?

গোটা বিশ্ব এখন সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা যা-ই দাবি করুক না কেন, বাংলাদেশের কিছু অতি সুবিধাভোগী ছাড়া সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনযাপনের সংস্থান জোগাতে দিশেহারা। এরই মধ্যে শ্বাসরুদ্ধকর এ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণ খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অত্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন সহিংসতা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। আমরা কি আশা করতে পারি না– দলীয় নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং জাতির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবার প্রতি একই আহ্বান জানাবেন এবং কার্যকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উদ্বেগ থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে তিনি উদ্যোগ নেবেন!

বিএনপিও তো দাবি করে তারা জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করে। তাদের কথাবার্তা, ঘোষণায় শুধু সরকার পতনের ডাক না দিয়ে ক্ষমতায় গেলে কী উপায়ে মানুষের মঙ্গল করবেন, সে বার্তা দেখার প্রত্যাশা কি জনগণ করতে পারে না? জনগণ শুধু একটি গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজে শান্তিতে বাস করতে চায়। সত্যিকার অর্থে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে শাসিত হতে চায়। রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছে আবেদন– সহিংস পথ ছেড়ে অহিংস, নিয়মতান্ত্রিক পথে দ্বন্দ্ব নিরসন করে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করুন। জনগণকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিন।

লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার নেত্রী

আরও পড়ুন