পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ
আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪ | ০১:৩২ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ | ০৯:৫১
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বরাবরের মতোই পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সবচেয়ে বেশি ২২০টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এ খাতে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭০ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা, যা এডিপির প্রায় ২৭ শতাংশ। একইভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন এডিপি অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব জোগান থেকে আসবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ কোটি টাকা আসবে বিদেশি ঋণ থেকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এনইসির বৈঠকে নতুন এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। এনইসি চেয়ারপারসন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং সিটি করপোরেশনের জন্য ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এডিপি অনুমোদন, প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সরকারের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকারসহ সচিব পদমর্যাদার অন্য সদস্যরা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখন থেকে উপজেলাভিত্তিক কোনো প্রকল্প না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, এতে স্থানীয় উন্নয়ন শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। কোনো উপজেলায় একটি প্রকল্প আছে, অথচ পাশের উপজেলায় নেই। এতে উপজেলা পর্যায়ে বৈষম্য তৈরি হয়। এ কারণে জেলাভিত্তিক প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করার নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই মানসম্পন্ন করার জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন করতে হবে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি বোঝার জন্য প্রতি তিন মাসে একবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অবহিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের অন্যান্য বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, চলতি অর্থবছর
এডিপি বাস্তবায়নের গতি সন্তোষজনক নয়। এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে মন্ত্রী এবং সচিবদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের গতি অত্যন্ত ধীর। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলাদাভাবে বৈঠক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইএমইডিকে। আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গত ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রক্ষেপণের চেয়ে এডিপিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তায় কম বরাদ্দের কারণ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা সচিব বলেন, এ নিয়ে এনইসি বৈঠকেও কথা উঠেছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নেওয়ার পর অতিমারি করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতের বাস্তবতায় বরাদ্দে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। আগামীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসরণের ভিত্তিতে এডিপি বরাদ্দ বিবেচনা করা হবে।
বৈঠকে এডিপি বরাদ্দ নিয়ে একটি উপস্থাপনা দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এতে বলা হয়, বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ প্রদানে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ খাত, শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানো এবং দারিদ্র্য কমানো সংক্রান্ত প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের গতিশীলতা বজায় রাখা, কর্মসৃজনের আওতা সম্প্রসারণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণের যে নীতি-কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে, তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে আগামী অর্থবছরের এডিপি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি খাত
নতুন এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ প্রায় ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা এডিপির ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ বরাদ্দ এডিপির ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধায় ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়, যা মোট বরাদ্দের ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা এডিপির ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, যা মোট এডিপির ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। কৃষিতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা এডপির ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদে ১১ হাজার ৮৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোটের ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৬ হাজার ৪৯২ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দের ১০ মন্ত্রণালয়
স্থানীয় সরকার বিভাগের বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত এডিপির ১৫ শতাংশ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৩২ হাজার ৪২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বা এডিপির ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা, বা ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। বেশি বরাদ্দের বিবেচনায় এর পরে রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।