ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

কোটাবিরোধী আন্দোলন

আওয়ামী লীগে দুশ্চিন্তা অস্বস্তি বিভক্তি

আওয়ামী লীগে দুশ্চিন্তা অস্বস্তি বিভক্তি

প্রতীকী ছবি

 শাহেদ চৌধুরী

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ০১:১২ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ১১:৪১

সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগে এক ধরনের দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে অস্বস্তিও দেখা দিয়েছে। বিভক্তিও আছে এই আন্দোলনের পক্ষে ও বিপক্ষে। এই অবস্থায় আদালতের রায়ের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করছেন, আদালতের রায়েই সমাধান আসবে। 

এই নীতিনির্ধারক নেতাদের কয়েকজন সমকালকে জানিয়েছেন, সরকার খুবই সতর্কতার সঙ্গে বিরাজমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের গতি-প্রকৃতির দিকে। তাদের প্রত্যাশা, খুব দ্রুতই চলমান পরিস্থিতির সন্তোষজনক এবং সুন্দর সমাধান হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলনসহ সমসাময়িক সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ সোমবার চীন সফরে যাচ্ছেন। আগামী বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরে আসবেন। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি অবশ্য কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি সমকালকে বলেছেন, কোটার বিষয়টি আদালতের। 

আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরাও একই কথা বলছেন। তাদের দৃষ্টিতে, উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় সরকারি চাকরিতে কোটার প্রসঙ্গটি সর্বোচ্চ আদালতেই নিষ্পত্তি হবে। আর আদালতের রায় ঘোষণার পর বিষয়টি নির্বাহী বিভাগ দেখতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সমকালকে জানিয়েছেন, কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর কোনো সমাধান না হওয়ার আগেই হঠাৎ রাস্তায় নেমে আসার পাশাপাশি রাস্তাঘাট ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, এর পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র আছে কিনা। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেছেন, আদালতের রায় ঘোষণার পর নির্বাহী বিভাগ বিষয়টি দেখতে পারে। 

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা, নারীসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কোটা বাতিলের পর কী হয়েছিল, সেটা বিবেচনায় আনা দরকার বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের ভাষায়, এতে অনেক জেলার পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকার অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। নারীরাও খুব একটা সুযোগ পাননি। আর এজন্য হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। সরকারও ওই রায় মেনে নিয়েছে। আদালতে অ্যার্টনি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, কোটা বাতিল সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখতেই আপিল করা হয়েছে। 

কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন। এই আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী নানাভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তাদের অনেকেই কোটা সিস্টেমের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, সাবেক সচিবসহ অমুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন, সেটা সবার জানা। এসব কারণেই আওয়ামী লীগে এক ধরনের অস্বস্তি ও বিভক্তি শুরু হয়েছে। 

সেই সঙ্গে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। তাদের ভাষায়, সরকারবিরোধী সব আন্দোলনে ব্যর্থতার পর কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করেছে বিএনপি। এতে অবশ্য সরকারের জন্য বিএনপি নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে না। তার পরও সতর্ক রয়েছে সরকারি দল। এজন্য ইতোমধ্যেই ছাত্রলীগকে সতর্ক করা হয়েছে। দলের দায়িত্বশীল নেতা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরাও খুবই সতর্ক হয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করছেন। 

আরও পড়ুন

×