জরিমানা দিতে চায় না বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র

ফাইল ছবি
হাসনাইন ইমতিয়াজ
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪ | ০০:২৩
সরকারের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না অনেক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি)। চুক্তি অনুসারে জরিমানা করতে পারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে এই জরিমানা দিতে রাজি নন বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা। তাদের যুক্তি, পিডিবি সময়মতো বিল পরিশোধ করতে না পারায় এবং ডলার সংকটের কারণে ফার্নেস অয়েল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই জরিমানা হিসাব না করতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপ্পা)।
গত ১০ জুন পাঠানো চিঠিতে বিপ্পা প্রেসিডেন্ট ফয়সাল খান বলেন, গত ২৮ এপ্রিল ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রগুলোকে ৫০ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে (সক্ষমতার অর্ধেক) চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুসারে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। তবে এখনও ৩০ দিনের মধ্যে মাসিক বিল পরিশোধজনিত সমস্যার সমাধান হয়নি। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আর্থিক দুরবস্থার মুখে পড়েছে। পাশাপাশি চলছে ডলার সংকট। ফলে স্থানীয় ব্যাংকগুলো ফার্নেস অয়েল আমদানির জন্য এলসি খুলতে চাইছে না।
তিনি আরও বলেন, সময়মতো এলসি খুলতে না পারায় অনেক কেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পিডিবির চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না (আউটেজ ক্যালকুলেশন)। এ অবস্থায় বকেয়া বিল ও ফার্নেস অয়েল আমদানির জটিলতা দূর না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে আউটেজ ক্যালকুলেশনজনিত জরিমানা না করার দাবি জানান তিনি।
এর আগেও বিপ্পার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রগুলোর অ্যাকসেস আউটেজজনিত জরিমানা গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত রাখে পিডিবি। গত এপ্রিলে পিডিবি এই সময়সীমা গত জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছিল।
জানতে চাইলে বিপ্পা প্রেসিডেন্ট ফয়সাল খান সমকালকে বলেন, জরিমানা করতে চুক্তি অনুসারে সময়মতো বিল দিতে হয়। কিন্তু পিডিবিতে তাদের প্রায় চার মাসের বিল বাকি রয়েছে। এতে ফার্নেস অয়েল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বকেয়া প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যুৎ খাতে গত এক দশকে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বেড়েছে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে। গত এক যুগে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকরা লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যবসা করেছেন। এ ছাড়া কর ছাড়, ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি, প্রকল্পের জমি, ঋণ গ্রহণে সহযোগিতা, বারবার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোসহ সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছেন তারা। এরপরও প্রভাব খাটিয়ে সরকারের কাছ থেকে আরও সুবিধা বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকারঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেট ভারী করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মেয়াদ বারবার বাড়ানো হয়েছে। এর পরও ব্যবসায়ীরা সুযোগ চাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি মানলে তার চাপ গিয়ে পড়বে ভোক্তাদের ওপর।
- বিষয় :
- বিদ্যুতায়ন