ঢাকা বুধবার, ২১ মে ২০২৫

‘আম্মু কান্না করো না বাবা এসে পড়বে’

‘আম্মু কান্না করো না বাবা এসে পড়বে’

.রাজিব হোসেন

 আব্দুল হামিদ

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ০০:৪৭ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ২১:৫৫

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সারাদিন বাসায় ছিলেন রাজিব হোসেন। রাত ৮টার দিকে ছেলেমেয়ের জন্য নাশতা আনার কথা বলে বের হন। এর কিছু সময় পরই খবর আসে বিক্ষোভকারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর কদমতলী মুজাহিদনগর এলাকায় থানার পাশে রাজিবকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সিএনজি অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি কদমতলী থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন রাজিব। তাঁর মৃত্যুতে কান্না থামছে না পরিবারে। তাঁর স্ত্রী চম্পা বেগম সমকালকে বলেন, ‘আমার কান্নাকাটি দেখে পাঁচ বছরের ছেলে আলিপ বলে, আম্মু কান্না করো না বাবা এসে পড়বে। সন্তানের মুখে এ কথা শুনে ভাষা হারিয়ে ফেলি। আবার একটু পরেই আলিপ ও তিন বছরের মেয়ে নাফিজা ইক্রা মোবাইলে তাদের বাবার ছবি দেখে কান্নাকাটি করে। আমার সন্তানদের যারা এতিম করেছে, তাদের বিচার চাই।’

রাজিবকে পিটিয়ে হত্যার একটি ১১ সেকেন্ডের ভিডিও সমকালের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, তাঁর পরনে কোনো কাপড় নেই। অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। তখনও বিক্ষোভকারীরা তাঁর বুকের ওপর লাঠি দিয়ে আঘাত করে যাচ্ছে। একপর্যায়ে তাঁকে ফেলে চলে যায় তারা। মরদেহের পাশে ইটপাটকেল ও লাঠি পড়ে রয়েছে।

চম্পা বলেন, ‘কেউ জিজ্ঞাসা করলেই সন্তানরা বলে বাবা চকলেট আনতে বাইরে গেছে। আমার কাছেও জানতে চায় বাবা কখন আসবে। এখন কী বলব তাদের। হামলা চালানোর কথা শুনে ছুটে গিয়েও তাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার চোখের সামনে পেটাল নাশকতাকারীরা। আমি তাদের পায়ে পড়ে বলি, আমার দুইটা শিশু সন্তান আছে, তাঁকে ছেড়ে দেন। কিন্তু তাঁকে টেনেহিঁচড়ে রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে খুন করে মরদেহ রাস্তার পাশে ফেলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকেও সেদিন মেরে ফেললে আজ এমন দেখতে হতো না। 

হত্যার বিচার পাওয়ার আশায় কদমতলী  থানায় মামলা করেছি। সন্তানরা যেন বড় হয়ে দেখতে পারে তাদের বাবার খুনি কারা, ওদের শাস্তি হয়েছে।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই রাতে কদমতলী মুজাহিদনগর আহসানিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে রাজিবের ওপর হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় স্থানীয় কয়েকজন জড়িত।

রাজিবের বড় ভাই রাসেল বলেন, ২০ জুলাই সকালে মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। ওই দিনই জুরাইন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। মরদেহ চেনার মতো ছিল না, এজন্য গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়নি। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, মামলার আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

আরও পড়ুন

×