সিডও পূর্ণাঙ্গ কার্যকর হলো না চার দশকেও
নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ
.
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:৩৭
নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ-সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ সিডও স্বাক্ষরের চার দশকেও দুটি ধারা বাস্তবায়ন হয়নি। ১৯৮৪ সালে এই সনদ স্বাক্ষর করে সরকার। তবে তখনই সনদের ২ ও ১৬ (১) গ ধারায় শর্ত সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। ২০১৩ সালে এই দুটি ধারায় থাকা শর্ত প্রত্যাহার করে তা বাস্তবায়নে সরকারকে সুপারিশ করে জাতীয় আইন কমিশন। কিন্তু এখনও তা উপেক্ষিত। এই পরিস্থিতিতে নারীর সমানাধিকারের প্রত্যাশা নিয়ে আজ ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সিডও দিবস।
সিডও সনদের ২ ধারায় সাতটি উপধারা রয়েছে। এতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নীতি প্রণয়ন, নারীর প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে– এমন সব ফৌজদারি আইন ও বিধি বাতিল, উপযুক্ত আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উপযুক্ত ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। ১৬ (১) গ ধারায় বলা হয়েছে– বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান অবস্থা ও বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরষের একই অধিকার থাকবে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল সমকালকে বলেন, ‘সিডও নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের কথা বলেছে। সরকার দুটি ধারায় আপত্তি বহাল রাখায় নারীর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন এ ক্ষেত্রে একটি উদাহারণ হতে পারে। সংবিধানেও নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা রয়েছে, সিডও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া সেটারও পরিপন্থি। সমাজের মূলধারায় নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত বৈষম্য দূর করতে হবে।’
১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সিডও সনদ গৃহীত হয়। তবে এই সনদ কার্যকর শুরু হয় ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এ সনদ স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে। শুরুতে চারটি ধারার ওপর সরকারের আপত্তি ছিল। এর পর ১৯৯৭ সালে একটি ধারা ও একটি উপধারায় আপত্তি প্রত্যাহার করলেও দুটি ধারায় শর্তসাপেক্ষে আপত্তি বহাল রাখা হয়। ২০১৩ সালে আইন কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, সিডও সনদের ২ ও ১৬ (১) গ ধারা দুটি থেকে শর্ত সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হলে প্রচলিত আইন দিয়েই যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশাবলি ও পারিবারিক সুরক্ষা আইন দ্বারা নারীর প্রতি যে নির্যাতন ও সহিংসতা সংঘটিত হয়, তা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। এর ফলে নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য যেমন কমবে, তেমনি নারীর মানবাধিকারও নিশ্চিত হবে।
আইন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) ৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ইরান, সুদান ও সোমালিয়া ছাড়া সবাই সিডও অনুসমর্থন করেছে। ২৯টি রাষ্ট্র শর্ত-সংরক্ষণ ছাড়াই অনুসমর্থন করেছে। ১৯৬৯ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনবিষয়ক সনদ অনুসারে কোনো ধারা বা বিধানের শর্ত সংরক্ষণ করে আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সনদ স্বাক্ষর বা অনুসমর্থন করা বৈধ। বাংলাদেশ শর্ত সংরক্ষণ করে সিডও সনদ স্বাক্ষর করেছে।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, চার দশকেও সিডও সনদ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। এর সঙ্গে নারীর অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত। এ-সংক্রান্ত আইনগুলো সংশোধনের প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক সরকারকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।
- বিষয় :
- নারী