ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্রাহকের ৩৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ই-অরেঞ্জের

পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানাসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট

গ্রাহকের ৩৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ই-অরেঞ্জের

লোগো

 বকুল আহমেদ

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:৪৫ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১১:৫৫

বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ ও পেমেন্ট গেটওয়ে সফটওয়্যার শপ লিমিটেডের (এসএসএল) কর্ণধাররা গ্রাহকের ৩৫৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ই-অরেঞ্জের অন্যতম কর্ণধার বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।   

২০২১ সালের অক্টোবরে গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ২৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছিল সিআইডি। ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও বীথি আক্তার, চিফ অপারেটিং অফিসার আমান উল্লাহ চৌধুরী, উপদেষ্টা মাসুকুর রহমান, পরিচালক সাবেক পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ই-কমার্স ব্যবসার নামে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ব্যবসায়িক লেনদেনের বাইরে নগদ উত্তোলন ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আসামিরা মানি লন্ডারিং করেছেন। গ্রাহকের টাকা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে গ্রহণ করার পরও পণ্য সরবরাহ না করে চক্রটি প্রতারণা করেছে। ২৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের কথা বলা হয় এজাহারে।

মামলাটি সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম শাখা তদন্ত করে। তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দাখিল করতে সংস্থাটির প্রায় তিন বছর সময় লেগে গেল। 

তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম শাখা থেকে সদ্য বদলি হওয়া পুলিশ পরিদর্শক জিল্লুর রহমান সমকালকে বলেন, এজাহারনামীয় আসামি ছিল পাঁচজন। তবে তদন্তে আরও সাতজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৫৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত রোববার আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। 

চার্জশিটভুক্তরা হলেন– শেখ সোহেল রানা, তাঁর বোন ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, সোনিয়ার স্বামী মাসুকুর রহমান, খালু মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ, ই-অরেঞ্জের আরেক মালিক বীথি আক্তার, কর্মকর্তা আমানউল্লাহ চৌধুরী, মেহেদী হাসান, নাজমুল আলম রাসেল, মঞ্জুর আলম পারভেজ, সফটওয়্যার শপ লিমিটেডের (এসএসএল) চেয়ারম্যান সাবরিনা ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও কর্মকর্তা নূরুল হুদা। এর মধ্যে সোনিয়া, মাসুকুর, আমানুল্লাহ ও নাজমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে সোনিয়া ও মাসুকুর কারাগারে রয়েছেন।

তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, পেমেন্ট গেটওয়ে এসএসএল শর্তবহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে জ্ঞাতসারে ই-অরেঞ্জ ডট শপকে প্রতারণায় সহায়তা করেছে। ই-অরেঞ্জের ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৭০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৯৫৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে এসএসএল। তা থেকে এসএসএল ২২ কোটি ১৩  লাখ টাকা কমিশন নিয়েছে।

এদিকে মামলার পরপরই ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ঢাকার বনানী থানার সে সময়ের পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে যান। প্রতারণার খবর সামনে আসার পর সোহেল রানাকে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের চাকরির আড়ালে তিনি ই-অরেঞ্জ শপ পরিচালনা করতেন। ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে দেশটিতে গ্রেপ্তার হন তিনি। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে সাজা দেন আদালত। পরে জামিন পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তাঁকে ভারত থেকে দেশে ফেরানোর বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। সোহেলের বিরুদ্ধে ঢাকায় ৯টি মামলা রয়েছে।

জানা যায়, করোনা মহামারির সময় বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা বেড়ে যায়। মানুষের কাছেও এগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে পণ্য বিক্রির নামে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান তা পাচার করেছে  বিদেশে, আবার কেউ কেউ ই-কমার্স  প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে ব্যবহার করেছে অন্য প্রতিষ্ঠানে। সে সময় প্রতারণার শিকার হয়ে গ্রাহকরা দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও জড়িতদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সিআইডি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ১১টি মামলা করে। তার মধ্যে ই-অরেঞ্জও রয়েছে।

ই-অরেঞ্জ লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পণ্য ক্রয়ের সুযোগের কথা বলত। এতে গ্রাহকরাও আকৃষ্ট হয়ে পণ্য কেনার জন্য অর্থ দেন। অনেকেই ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে টাকা লগ্নি করেছিলেন। প্রথম দিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করা হতো। এতে কিছু গ্রাহক সাময়িকভাবে লাভবান হয়েছেন। পরে আরও লাভের আশায় আরও পণ্যের অর্ডার দেন। এর পরই নেমে আসে বিপর্যয়। 

ই-অরেঞ্জ ছাড়াও গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে– ইভ্যালি, সিরাজগঞ্জ শপ, নিডস, টোয়েন্টিফোর টিকেটি, উইকুম, আকাশ নীল, আলাদিনের প্রদীপ, আমার বাজার, আস্থার প্রতীক, বাড়ির দোকান ডটকম, নিরাপদ এবং ইনফিনিটি মার্কেটিং লিমিটেড।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×