সমকালকে বিএসএমএমইউ উপাচার্য
গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষার ফলাফল চলতি সপ্তাহেই

ফাইল ছবি
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২০ | ০৭:০০ | আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ | ০৭:০৬
নভেল করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ শনাক্তকরণে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত র্যাপিড কিটের পরীক্ষার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে আগামী বুধবারের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হবে বলে শনিবার সমকালকে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া।
কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবন করা অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতার পরীক্ষা এ সম্পর্কিত কমিটি শেষ করেছে। এখন এর ফলাফল প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে যে কোন দিন এই ফলাফল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দেওয়া সম্ভব হবে। এমন হতে পারে- বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আবার দু’এক দিনের মধ্যেও দেওয়া হতে পারে। তবে আশা করি, আগামী বৃহস্পতিবারের চেয়ে বেশি সময় লাগবে না।
এ দিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত দুই ধরনের কিটের মধ্যে অ্যান্টিজেন কিটের ক্ষেত্রে নমুণা সংগ্রহের ত্রুটিজনিত কারণে এই পরীক্ষা স্থগিত রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এ কারণে শুধুমাত্র অ্যান্টিবডি কিটের পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, গণস্বাস্থ্য অ্যানিন্টবডি ও অ্যান্টিজেন কিট দিয়েছিল। অ্যান্টিজেনের ক্ষেত্রে প্রথমে তারা রক্ত থেকে নমুণা সংগ্রহের কথা বলে। পরে তারা সেটা প্রত্যাহার করে লালা থেকে নমুণা সংগ্রহের কথা বলে। সর্বশেষ গত ২ জুন চিঠি দিয়ে দ্বিতীয় দফায় দেওয়া অ্যান্টিজেন কিটও প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ কারনে এখন যেটা পরীক্ষার জন্য আছে অর্থাৎ, অ্যান্টিবডি কিটের পরীক্ষার ফলাফলই দেওয়া হচ্ছে।
গত ২ জুন জমা দেওয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি জিআর কভিড-১৯ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের নমুনা (লালা) যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহে অসামঞ্জস্যতা পাওয়ায় সঠিক ফলাফল নির্ণয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন শনাক্তকরণের জন্য যথাযথ উপকরণ লালার নমুনায় থাকছে না বা অন্য বস্তুর মিশ্রণ লক্ষণীয়। সম্মিলিত মনিটরিং টিম এই সমস্যাটি চিহ্নিত করেছে। গণস্বাস্থ্য আরএনএ বায়োটেক টেকনিক্যাল টিম এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের আরঅ্যান্ডডি ল্যাবে সুনির্দিষ্টভাবে সর্বোপরি ব্যবহারযোগ্য লালা সংগ্রহ পদ্ধতি প্রয়োগের কাজ শুরু করেছে। যা শিগগিরই আমরা আপনাদেরকে জানাতে পারবো বলে আশা করছি। এতে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে। এমন অবস্থায় আমাদের লালা সংগ্রহের সঠিক পদ্ধতি নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটটির পরীক্ষা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা এই দুইটি লট ফেরত এনে নতুন লট বদলে দেবো।’
ওই চিঠি দেওয়ার পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের র্যাপিড কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীল সাংবাদিকদের জানান, গণস্বাস্থ্য কেন্ত্রের উদ্ভাবিত অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি কিটে কোনো ত্রুটি নেই। অ্যান্টিজেন কিটে পরীক্ষা করা হয় লালা থেকে। লালা সংগ্রহ করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। নমুনা সংগ্রহের সময় লালার সঙ্গে যদি কফ বা থুথু থেকে যায়, তবে অ্যান্টিজেন কিটের পরীক্ষায় সঠিক ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। দেখা গেছে, বিএসএমএমইউ লালার যে নমুনা সংগ্রহ করছে, তার সঙ্গে কফ বা থুথু চলে এসেছে। এটা যে তাদের দোষ তা নয়। যখন কাউকে লালা দিতে বলা হয়েছে, তিনি লালার সঙ্গে কফ বা থুথু দিয়ে দিয়েছেন। ফলে অ্যান্টিজেন কিটের পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে আমরা বিএসএমএমইউকে চিঠি দিয়ে অ্যান্টিজেন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা আপাতত স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘অনেক পরিশ্রম করে উদ্ভাবন করা এই কিটে কোন ত্রুটি নেই।’
গত মার্চ মাসে কভিড-১৯ শনাক্তে র্যাপিড কিট উদ্ভাবন করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ড. বিজন শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন ও ড. ফিরোজ আহমেদের সমন্বয়ে গবেষক দল অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কিট তৈরি করে। এরপর সেই কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য তৃতীয় পক্ষ পরীক্ষার অনুমোদন নিয়ে বেশ কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়। অবশেষে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের পর গত ১৩ মে বিএসএমএমইউকে কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য কিট জমা দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এ কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষায় বিএসএমএমইউ-এর ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিই অ্যান্টিবডি কিটের রিপোর্ট প্রস্তুত করছে।