ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

ডেঙ্গু পরিস্থিতি

মৃত্যু বাড়ছে শক সিনড্রোম ও ফ্লুইড জটিলতায়

মৃত্যু বাড়ছে শক সিনড্রোম ও ফ্লুইড জটিলতায়

.

 তবিবুর রহমান

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪১

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত ১৬৩ জন মারা গেছেন। তারা অধিকাংশই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন। শক সিনড্রোম ও শরীরে তরল ব্যবস্থাপনার (ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট) জটিলতায় তারা মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার রাজধানীতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে ছয় সদস্যের দুটি কমিটি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেপ্টেম্বরে এই রোগে মারা গেলেন ৮০ জন। আর এই বছরে মোট মৃত্যু হলো ১৬৩ জনের। গত এক দিনে সারাদেশে ১ হাজার ১৫২ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর মোট আক্রান্ত দাঁড়াল ৩০ হাজার ৯৩৮ জন, যাদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এক মাস ধরে ডেঙ্গুর সেরোটাইপ নিয়ে গবেষণা করছে। এতে দেখা যায়, এবারও ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে ‘ডেন-২’ বেশি। আইইডিসিআর ডেঙ্গু পজিটিভ ৪০ জনের নমুনা বিশ্লেষণ করে ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশের শরীরে ডেন-২-এর উপস্থিতি পায়। ২০ দশমিক ৫০ শতাংশের শরীরে পাওয়া যায় ডেন-৩ এবং ১০ দশমিক ৩০ শতাংশের শরীরে ডেন-৪। বিশ্লেষণে ডেন-১ আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  সহকারী অধ্যাপক ডা. মো সাইফুল্লাহ বলেন, ‘অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী শক সিনড্রোম নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। রক্তক্ষরণ ও শরীরে পানিশূন্যতার কারণে অনেকে অচেতন হয়ে পড়ছেন। কারও কারও পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসছে।’ তিনি জানান, এবার ডেন-২-তে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, ‘যারা বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঢাকায় আসছেন, তাদের ফ্লুইড ব্যবস্থাপনায় আলাদা চিকিৎসা প্রয়োজন। সঠিক স্যালাইন দিয়েই ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট সম্ভব।’ শকে চলে যাওয়া রোগী রেফার না করে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭০ জন, চট্টগ্রামে ২৩৩ জন, ঢাকায় ২১৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৫২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৮৭ জন, খুলনায় ৮৬ জন, ময়মনসিংহে ২৭ জন, রাজশাহীতে ৪০ জন এবং রংপুরে ৩৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ঢাকা মহানগরে দু’জন, বরিশালে একজন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় একজন এবং চট্টগ্রামে একজন।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘থেমে থেমে বৃষ্টির পর তাপমাত্রা বাড়ছে। এমন আবহাওয়া এডিস মশার জন্য উপযোগী। তাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি আক্টোবরে বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান জানান, ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় গাইডলাইন হালনাগাদ করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা চলছে। চিকিৎসকদের একটি টিম ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। 

ছয় সদস্যের দুই কমিটি
গতকাল সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ছয় সদস্যের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে তিনজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সিটি করপোরেশনের প্রশাসককে আহ্বায়ক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন। 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম ছারোয়ার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্টোমোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল ইসলাম এবং কীটতত্ত্ববিদ মো. রেজাউল করিম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেফালি বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্টোমোলোজিস্ট ড. তানজিন আক্তার এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান। 
 

আরও পড়ুন

×