ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পদের হিসাব চাওয়ায় বেবিচক কর্মীরা আতঙ্কে

অনেকেরই অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগ

সম্পদের হিসাব চাওয়ায়  বেবিচক কর্মীরা আতঙ্কে

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)

শহিদুল আলম

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪ | ২১:১৭ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪ | ২২:১৪

দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকারি নির্দেশনার অংশ হিসেবে প্রায় ৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও সম্পদের হিসাব দিতে হবে। 

বেবিচকের এক চিঠিতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসাব চাওয়ায় সংস্থাটির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক আর অস্থিরতা। অনেকে বলেছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি করে যারা সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন, তারা বিপদে পড়তে পারেন। 

হযরত শাহজালালসহ দেশের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিমানবন্দরে ডিউটির নামে স্বর্ণ, আদম পাচারসহ বিভিন্ন চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বেবিচকের একটি চক্রের বিরুদ্ধে। সম্পদের হিসাব চাওয়ার চিঠি পাওয়ার পর থেকে তারা আতঙ্কে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
    
এ ব্যাপারে বেবিচকের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) তিরান হোসেন সমকালকে জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। এতে আতঙ্ক ও অস্থিরতার সৃষ্টি হলেও করার কিছুই নেই। সরকারের আদেশ মানতে হবে সব সরকারি কর্মচারীকে। 

বেবিচকের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার বিষয়টি একটি মহৎ উদ্যোগ। এ উদ্যোগের ফলে দেশের সরকারি, আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতা ও  জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। বেবিচকে যদি এ রকম কেউ থাকে, তার ক্ষেত্রে একই পরিস্থিতি হবে। যারা অসৎ, শুধু তাদের মধ্যেই অস্থিরতা থাকবে, অন্যদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।

জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ২২ সেপ্টেম্বর সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসাব চেয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে বেবিচক ১ অক্টোবর ৪৩টি শাখায় এই চিঠি পাঠায়। চিঠি ইস্যুর পরই মূলত শুরু হয় অস্থিরতা। বিভিন্ন দায়িত্বে থেকে যারা নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকা কামিয়েছেন, তারা বিপদে পড়তে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বেবিচক ঘিরে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। এই সিন্ডিকেটগুলো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী গত ১৫ বছর আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। চিঠি ইস্যুর পর তারাই মূলত আতঙ্কের মধ্যে আছেন। হাসিনা সরকারের সময় বেবিচকের যেসব কর্মকর্তা নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানদের নামে  ফ্ল্যাট, প্লট, গাড়ি ও বাড়ি কিনে আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন, শুধু তারাই আতঙ্কে আছেন।    

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণীতে কোনো ধরনের সন্দেহ দেখা দিলে তা বিভাগীয় তদন্তের আওতায় আনা হবে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমেও তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। কর্মীদের স্ত্রী বা স্বামী ও সন্তানদের সম্পদের হিসাবও জমা দিতে হবে। সুতরাং এখানে কিছু গোপন করার সুযোগ থাকবে না। 

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, আগে প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হতো। সেখানে স্ত্রী বা সন্তানদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বিষয় থাকত না। এ ক্ষেত্রে অনেকে স্ত্রী-সন্তানদের নামেও সম্পদ করতেন। এবারে চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি পরিবারের সব সদস্যের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য নির্দিষ্ট ফরমও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×