স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিন দাবি
আলটিমেটাম দিলেন ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা
নীলক্ষেত-সায়েন্স ল্যাব অবরোধ মানুষের ভোগান্তি

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিন দাবিতে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সোমবার রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় - সমকাল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪ | ০০:৫১
শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০১৭ সালে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করে দেয় সরকার। তবে এই সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজে ঢাবি কর্তৃপক্ষের কোনো এখতিয়ার নেই। আবার অধিভুক্ত কলেজগুলোর জন্য আলাদা অফিস ও জনবল নেই ঢাবিতে। ফলে প্রায়ই তৈরি হচ্ছে নানা জটিলতা, আন্দোলনে নামছেন শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর নীলক্ষেত-সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে আশপাশের রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়, ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।
শিক্ষার্থীদের দাবি হলো– ১. সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য দ্রুত সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে; ২. সংস্কার কমিটি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবে এবং ৩. সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে, যাতে শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার পরিবেশ তৈরি না হয়।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই তিন দাবি পূরণ না হলে বুধবার থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা দেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান গতকাল এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই যেসব দাবিতে নীলক্ষেত অবরোধ করছে তার মধ্যে রয়েছে সিজিপিএ শর্ত শিথিল করা ও অটো প্রমোশন। তবে মোটাদাগে আরও কিছু সমস্যার কথা জানান এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো– শিক্ষার্থীদের পরিচয়ের সংকট, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকট, হুটহাট পরীক্ষার রুটিন প্রদান, গণহারে ফেল, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বৈষম্য ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার অতিরিক্ত ফি আদায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সাত কলেজের সিলেবাস প্রণয়ন, ভর্তি কার্যক্রম, পরীক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ, সনদ প্রদানসহ একাডেমিক যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে ঢাবি। তবে শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, ফলাফল শিট জমাদানে দেরি করা, যথাসময়ে সিলেবাস শেষ না করা, বাজেট বরাদ্দ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ঢাবি কর্তৃপক্ষের অধীন নয়। ফলে এসব বিষয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করার থাকে না।
ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস বলছে, অধিভুক্ত হওয়ার পর সাত কলেজের মানোন্নয়ন হয়েছে। প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যাচ্ছেন। বর্তমানে এই সাত কলেজে সেশনজট নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নিয়ম, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে কলেজের অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশনের যে দাবি তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের সঙ্গে যায় না।
এই সাত কলেজের দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বোর্ড। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করেন কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সবশেষ সভায় এই সাত কলেজের জন্য আলাদা ইউনিট করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ বিষয়ে অগ্রগতি নেই। ঢাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাত কলেজের জন্য আলাদা একটি ইউনিট করার প্রস্তাব সিন্ডিকেট সভায় পাঠানো হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে অগ্রগতি নেই।’ সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র ইউনিট করলে জটিলতা কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
অধিভুক্ত সাতটি কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
- বিষয় :
- শিক্ষার্থীরা