ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সরকারি নির্দেশনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না আদালতে

সরকারি নির্দেশনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না আদালতে

.

 সাব্বির নেওয়াজ

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৫৭ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ০৯:৪০

তিন বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন, ২০২৪-এর খসড়া’ প্রণয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আইনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকায় আরও ১১ ক্যাটেগরির পণ্য স্থান পাচ্ছে। অত্যাবশ্যকীয় এসব পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ, বিতরণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আইনটি হচ্ছে। তবে পণ্যগুলোর বিষয়ে সরকারি কোনো আদেশ-নির্দেশনার ব্যাপারে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে। জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব সেলিম উদ্দিন খসড়া প্রণয়নের কথা সমকালের কাছে স্বীকার করেন। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ‘দি কন্ট্রোল অব এসেন্সিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ কার্যকর রয়েছে। তাই বিদ্যমান আইনটির স্থলে অধিকতর যুগোপযোগী ও হালনাগাদ করতে এ আইনটির খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের তপশিলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে বলা হয়েছে, খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ধান, চাল, গম ও আটা, ভুট্টা, আলু, বীজ ও চারা, মসুর ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল ও তৈলবীজ, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা ও কাঁচামরিচ, দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, খাবার লবণ (বিট লবণ ব্যতীত), চিনি, গুড়, মাছ, মৎস্যজাত খাদ্য, মাংস, দুধ, ডিমসহ ৩০টি খাদ্যজাত পণ্য এবং এর বাইরে আরও ১০ ক্যাটেগরির পণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

তাছাড়া শিশুখাদ্য, রোগীর খাদ্য এবং অনুরূপ খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ (ইনজেকশনসহ) চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসাসহ অন্য সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, কাগজ, নিউজপ্রিন্ট, সার, জ্বালানি তেল (পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল), গ্যাস (পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাস, এলএনজি, এলপিজি ও অন্য যে কোনো রূপান্তরিত পেট্রোলিয়াম) সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্যাদি, বিদ্যুৎ (সৌরবিদ্যুৎসহ), লোহা ও ইস্পাত, সিমেন্ট অন্তর্ভুক্ত হবে।

খসড়ার ৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রয়োজনে সরকার যে কোনো সময়ে গেজেট অথবা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে নতুন পণ্য সংযোজন এবং পুরোনো পণ্য বাদ দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নতুন অন্তর্ভুক্ত পণ্যটির অত্যাবশ্যকীয় মেয়াদকাল ছয় মাসের বেশি হবে না। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে মেয়াদ ছয় মাসের পর বাড়াতে পারবে।

আইন অনুসারে বা অর্পিত ক্ষমতা অনুসারে আইনের আওতায় সরকারি কোনো আদেশের ব্যাপারে আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। খসড়া আইনে কোনো ঘটনা বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোনো স্থান কিংবা যানবাহনে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং পণ্য আটকের বিধান রাখা হয়েছে।

কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি এ আইনের আদেশ লঙ্ঘন করলে কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা এজেন্ট দোষী সাব্যস্ত হবেন, যদি তিনি প্রমাণে ব্যর্থ হন যে, আইনের ওই লঙ্ঘন তাঁর জানার বাইরে সংঘটিত হয়েছে।

আইনের ৪ ধারায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, সরবরাহ, বিক্রয়, নিষ্পত্তি, অধিগ্রহণ, ব্যবহার বা ভোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এবং এর ব্যবসা-বাণিজ্য সরকার সীমিত করতে পারবে। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে যে কোনো সময় আদেশ জারির মাধ্যমে (ক) লাইসেন্স, পারমিট বা অন্য কোনোভাবে কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন বা প্রস্তুতকরণ, মজুত, পরিবহন, বিক্রয়, নিষ্পত্তি, অধিগ্রহণ, ব্যবহার বা ভোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। (খ) বিক্রয়ের জন্য রাখা কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বিক্রয় স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। (গ) কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ক্রয়/বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। (ঘ) কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মজুতদার যে কোনো ব্যক্তিকে তার মজুত পণ্যের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ আদেশে উল্লিখিত মূল্যে বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ শ্রেণির ব্যক্তিদের কাছে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিক্রি করার নির্দেশ দিতে পারবে। (ঙ) কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ/বণ্টন, ব্যবসায় বা বাণিজ্যে নিয়োজিত ব্যক্তিদের এ-সংক্রান্ত যে কোনো প্রমাণ এবং তথ্য সরবরাহ করার নির্দেশ দিতে পারবে। (চ) কোনো ঘটনা ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষভাবে কোনো স্থান, যানবাহন, জাহাজ এবং আকাশযানে প্রবেশ ও তল্লাশি করতে পারবে। এ সময় অনুমোদিত কোনো পণ্য পাওয়া গেলে তা নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করতে পারবে এবং এ-সংক্রান্ত পণ্যের যথাযথ প্রমাণপত্র চাইতে পারবে।

এ আইনের যে কোনো বিধান লঙ্ঘনকারীকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। কেউ নির্দেশ পরিপালনে ব্যর্থ হলে, আদেশ লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে এমনকি প্ররোচনা দিলেও তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। মিথ্যা তথ্য দিলেও তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তি কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

নতুন আইনের খসড়ায় চা, সিগারেট, শেভিং ব্লেড, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, গ্লাস, কাঠ ইত্যাদি পণ্যকে নিত্যপণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, যে কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি উন্মুক্ত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে সরকার। 

আরও পড়ুন

×