ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

নির্বাচন ব্যবস্থা

টেকসই পদ্ধতির পথ খুঁজছে সংস্কার কমিশন

টেকসই পদ্ধতির পথ খুঁজছে সংস্কার কমিশন

ফাইল ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ০১:১৭

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, শুধু আগামী নির্বাচনের চিন্তা করছি না, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুঁজছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তিনি বলেন, অতীতে অনেক অন্যায়-অপকর্ম হয়েছে। এগুলো যাতে ভবিষ্যতে বন্ধ হয়, নির্বাচন ব্যবস্থা যাতে গণতান্ত্রিক, শক্তিশালী ও কার্যকর হয়, সেই ব্যবস্থা করব।

গতকাল শনিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সদস্যদের সঙ্গে সংস্কার কমিশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা প্রায়ই শুনি, নির্বাচন ঘিরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীসহ নির্বাচনে যুক্তদের নানাভাবে হয়রানি ও নজরদারি চালানো হয়। গত কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা গুরুতর অন্যায়-অত্যাচার করেছে। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। তবে সেটা হয়নি। ভবিষ্যতে আবার কেউ যেন এমন অপরাধ করতে না পারে, সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে।

তিনি বলেন, ভোটের সময় কোটি কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য হয়। রাজনীতি জনকল্যাণের নয়, এখন ব্যবসা। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে হলে রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার। আমরা অনেক কিছু কল্পনা করছি, বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, সেটা নিয়ে কাজ করতে চাই। সবার মতামতের ভিত্তিতে যেগুলো টেকসই মনে হবে সরকারের কাছে, একগুচ্ছ সুপারিশ করব। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব এজেন্ডা নেই। কারও পক্ষে-বিপক্ষে, কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আমরা একত্র হইনি। আমরা বলিষ্ঠভাবে কাজ করে অনেক দূর অগ্রসর হচ্ছি।
আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত না চাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ড. বদিউল বলেন, ‘আমরা সরকারের অভিপ্রায়ে কাজ করছি। সরকার নির্ধারিত কার্যপরিধির ভেতর থেকে কাজ করাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোন প্রেক্ষাপটে এখানে এসেছি, প্রেক্ষাপট হলো– দেড় হাজারের মতো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ২০ থেকে ৩০ হাজার ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। জুলাই-আগস্ট রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা যেন না করি। আমরা শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে চাই। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে চাই। দেশটা সবার, সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য শুধু ২২ দলের কাছে প্রস্তাব চাচ্ছেন। দল তো ৪৭টি, এটা কি বৈষম্য হলো না? এ প্রশ্নে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা নিয়ে আমরা আরেক দিন সংবাদ সম্মেলন করব। আপনারা সরকারকে জিজ্ঞেস করেন। আমরা অনেকের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছি।

সংরক্ষিত নারী আসন প্রসঙ্গে বদিউল আলম বলেন, নারী আসনে সরাসরি ভোট হতে পারে। প্রতিটি আসনে যোগ্য নারী ভোটে নির্বাচিত হবেন। রোটেশন অনুযায়ী ভোট হলে দেখা যাবে চারটা নির্বাচনে প্রতিটি আসনে একজন নারী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ২১টি সভা হয়েছে। আইন-বিধিমালাগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সেই পর্যালোচনার নিরিখে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। অনলাইনের মাধ্যমে অনেক মতামত পাওয়া গেছে। সবার মতামত নিয়েই প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে।
সভায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার খারাপ হয়েছে। দলীয় প্রতীকে ভোট হোক, আমরা চাই না। স্থানীয় সরকার আইন পরিবর্তন করতে হবে।

আরএফইডির পক্ষ থেকে প্রস্তাবনায় সিসিটিভি ক্যামেরার যথাযথ ব্যবহার, বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারসহ নির্বাচন কমিশন আইনের ২৭ ও ২৯ ধারা সংশোধনের দাবি করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে গণমাধ্যমকর্মী স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায়। আরও সুস্পষ্ট সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরতে হবে। কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়, সে জন্য প্রয়োজনে সংবিধান সংস্কার করতে হবে।
এই মতবিনিময় সভায় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×