বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী চার্জশিটভুক্ত আসামি
মো. শহীদুল আফরোজ
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২১:৫৬ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:০১
দুর্নীতি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি। খেটেছেন জেলও। তবুও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শহীদুল আফরোজকে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) করা হয়েছে। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে শহীদুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর পর বিধি ভঙ্গ করে মানবিক বিবেচনায় উল্লেখ করে তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (সিভিল) পদে বহাল রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) পদ দেওয়া হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শহীদুল আফরোজের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে যান। এর পর মামলা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে তার বিরুদ্ধে বিচারকার্য শুরু হবে। এ পর্যায়ে চার্জশিটভুক্ত একজন আসামিকে পদোন্নতি দেওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতির মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার শহীদুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে। পরে তাকে প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও তিনি এখনও ওই পদে বহাল।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সুপারিশে শহীদুলকে স্বপদে বহাল করা হয়েছিল বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শহীদুল বিপুল পরিমাণ অর্থ ঘুস দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) পদ লাভ করেন।
দুদক জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য জেনারেটর কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালে বেবিচকের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। মামলায় একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে শহীদুল কারাগারে যান। বেবিচক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। শহীদুলসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক অভিযোগপত্র দিলে তা ২০২০ সালের মার্চে গ্রহণ করেন আদালত। পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এক পর্যায়ে শহীদুল জামিনে ছাড়া পান। বেবিচক তাকে এক বছর বেতন না বাড়ানোর মতো লঘুদণ্ড দিয়ে ২০২১ সালে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি করে। আর দুদকের মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বলবৎ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বেবিচক। তিনি সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।
২০২৩ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩৪তম বৈঠকে মানবিক দিক বিবেচনা শহীদুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাওয়া হয়। পরে মন্ত্রণালয় থেকে শহীদুলের পক্ষে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারে মতামত দেওয়া হয়। এই মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে শহীদুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) করা হয়।
- বিষয় :
- দুদক
- দুদক মামলা
- বেবিচক