বাংলাদেশের পতাকায় আগুন, কড়া প্রতিবাদ ঢাকার
ভারতের দ্বিচারিতা অত্যন্ত নিন্দনীয়: আসিফ নজরুল
পতাকা
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৫০ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০৮:০৫
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামে একটি সংগঠনের সহিংস বিক্ষোভের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুনের মতো অবমাননাকর কাজের নিন্দা জানানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ অবস্থান তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে ঢাকার বিপরীত অবস্থানে রয়েছে দিল্লি। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এগুলোকে ভারতের দ্বিচারিতা বলে আখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। অথচ ভারতের নিজ ভূখণ্ডে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘটে চলা অসংখ্য নির্মম ঘটনা নিয়ে তাদের কোনো লজ্জা বা অনুশোচনা দেখা যায় না। ভারতের এই দ্বিচারিতা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং আপত্তিকর।’
উপদেষ্টা আরও লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ (৬৪ দশমিক ১ শতাংশ) মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। আমরা দেখেছি, ছাত্র সংগঠন, মাদ্রাসা, রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মম ও উস্কানিমূলকভাবে হত্যার পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।’
গত বৃহস্পতিবার লোকসভায় প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেশটির সরকারের। বাংলাদেশজুড়ে গত আগস্টসহ বিভিন্ন সময়ে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর সহিংসতার খবর দেখেছে ভারত সরকার। তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ধর্মীয় স্থানগুলোতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।’
গত অক্টোবরে দুর্গাপূজায় সহিংসতা না হলেও জয়শঙ্কর দাবি করেন, মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার খবর পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, তাঁতীবাজারে পূজামণ্ডপে হামলা এবং সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে চুরির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। এসব ঘটনার পর বিশেষ নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপন নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুসংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন।
বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণের সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সে সময় বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ সহিংস হয়ে ওঠে। তারা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে ডেপুটি হাইকমিশনের সীমানায় পৌঁছায়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন দেয় এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা দাহ করে তারা। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে মনে হলেও ডেপুটি হাইকমিশনের সব সদস্যের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর জঘন্য কাজটির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যে কোনো ধরনের সহিংস কার্যকলাপের নিন্দা করে বাংলাদেশ। কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন এবং ভারতে বাংলাদেশের অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনের পাশাপাশি এর কূটনীতিক এবং অ-কূটনৈতিক সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।
ভারতের ফের উদ্বেগ
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মতো কোনো ঘটনা না হলেও ভারত সংখ্যালঘু ইস্যুতে উদ্বেগ অব্যাহত রেখেছে। গতকাল নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘উগ্র বক্তব্যের ঢেউ এবং সহিংসতা ও উস্কানির ঘটনা বৃদ্ধি’তে উদ্বিগ্ন ভারত। একে সংবাদমাধ্যমের অতিরঞ্জন হিসেবে খারিজ করা যায় না। সাবেক ইসকন সদস্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ‘সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ’ বিচারের প্রত্যাশা করছে ভারত।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মামলাকে অনেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করেছেন। এর জবাবে জয়সোয়াল বলেন, ‘আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। আমরা প্রত্যাশা করি, ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে সবকিছু হবে।’
- বিষয় :
- নির্যাতন
- আগুন
- পতাকা
- ষড়যন্ত্র
- আসিফ নজরুল